চট্টগ্রামের সন্তান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা থেকেই ড. ইউনূসসহ ৫ জন।
উপদেষ্টাদের মধ্যে চট্টগ্রামের ৫ জন হচ্ছেন- শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমির আ ফ ম খালিদ হাসান, লেখক ও গবেষক ফরিদা আকতার, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো ফারুক-ই-আজম (বীর প্রতীক)।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে মোট ১৭ জন উপদেষ্টার নামের তালিকা পাঠানো হলেও তিনজন ঢাকার বাইরে অবস্থান করায় শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। তারা হলেন- বিধান রঞ্জন রায়, সুপ্রদীপ চাকমা ও ফারুক-ই-আজম।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) দুপুরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করা হয়। অধ্যাপক ড. ইউনূসের হাতে দেওয়া হয়েছে ২৭ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হাসান। ফরিদা আখতারকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং নুরজাহান বেগমকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হাসান। আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ (আ ফ ম) খালিদ হাসানের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শায়। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ নিয়ে ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর খুতবা : একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক গবেষণা’ বিষয়ের ওপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। আ ফ ম খালিদ হাসান একজন সুন্নি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত হিসেবে বেশ সুপরিচিত। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমির ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা।
ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর কুয়াইশ বুডিশ্চরের সন্তান, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরুর সূচনাকাল থেকে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। উল্লেখ্য, তিনি প্রখ্যাত নাট্যকার সেলিম আল দ্বীনের বোন।
চন্দনাইশের হারলা গ্রামে জন্মগ্রহণকারী লেখক ও গবেষক ফরিদা আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ফরিদা আখতার বহু বছর ধরে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অবস্থা জানা এবং পরিবর্তনের জন্য নীতিনির্ধারণী গবেষণা ও লেখালেখি করে আসছেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে পরিচালিত কার্যক্রমের মারাত্মক কুফল ও নারী স্বাস্থ্যের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে লেখালেখি এবং প্রতিকার আন্দোলের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সুপরিচিত ফরিদা আখতার। তিনি বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে- নারী ও গাছ, কৈজুরী গ্রামের নারী ও গাছের কথা। চট্টগ্রামের সন্তান হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাস করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো ফারুক-ই-আজম (বীর প্রতীক)। নৌ কমান্ডো ফারুক-ই-আজম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তবে দেশের বাইরে থাকায় তিনি এখনো শপথ নিতে পারেননি। দেশে ফেরার পর তিনি শপথ নেবেন বলে জানা গেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম হাটহাজারীর ফরহাদাবাদের সন্তান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সমন্বিত যুদ্ধাভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর আভিযানিক দলের উপ-অধিনায়ক ফারুক-ই-আজম দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছিলেন।