বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ দুই থেকে তিন বছর হওয়া উচিত বলে মনে করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকরা।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় গণমাধ্যমগুলোর ২০ জন সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকে অংশ নিয়ে সম্পাদকরা এ মত দেন।
মতবিনিময় সভায় ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, আমাদের সময় সম্পাদক আবুল মোমেন, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদক ইনাম আহমেদ, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. ম. রমিজ উদ্দীন চৌধুরী, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, দেশ রূপান্তর সম্পাদক মোস্তফা মামুন, প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
শফিকুল আলম বলেন, সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা জানতে চান, এই সরকারের মেয়াদ কতদিন হওয়া উচিত। এর উত্তরে অনেকেই দুই থেকে তিন বছর মেয়াদের কথা বলেছেন। আবার অনেকেই ‘যৌক্তিক সময়’ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।
‘এই যৌক্তিক সময় আসলে কতটুকু, এ বিষয়ে সম্পাদকদের কাছে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কী কী কাজ করতে হবে, ন্যূনতম কতটুকু কাজ করতে হবে,’ এসব বিষয়ও জানতে চান তিনি।
শফিকুল আলম বলেন, ‘উত্তরে বেশিরভাগ সম্পাদকই বলেছেন, যেসব এজেন্ডার বাস্তবায়ন বা যে কাজটা অন্তর্বর্তী সরকার করবে; সে কাজটাই আসলে নির্ধারণ করবে এই সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে।’
তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ প্রসঙ্গে সম্পাদকরা সংবিধান সংশোধন, সংবিধান নতুন করে লেখা, আইন কমিশন, সংবিধান কমিশন, মিডিয়া কমিশন, পুলিশের জন্য কমিশন, নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথা এসেছে। পাশাপাশি গণমাধ্যম লক্ষ্য করে প্রণয়ন করা সব কালা-কানুন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সম্পাদকরা।
‘বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এটা একটা মস্ত বড় সুযোগ, বাংলাদেশের জন্য, আমাদের সবার জন্য। রাষ্ট্র মেরামত করার জন্য। বাংলাদেশকে নতুন শিখরে নেওয়ার জন্য যা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান আমাদের দিয়েছে, এ সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে। আপনারা অন্তর্বর্তী সরকারের দোষত্রুটি নিয়ে প্রচুর লেখেন, আপনারা জানান। আমাদের দোষ-ত্রুটি নিয়ে লিখবেন। আমি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি এবং ভাইব্রেন্ট মিডিয়া দেখতে চাই,’ বলেন শফিকুল।
প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে ড. ইউনূস একটি তথ্য জানান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের (দুবাই) ফেডারেল আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ৫৭ বাংলাদেশিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। শিগগিরই তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
প্রেস সচিব জানান, মোট ২২ জন সম্পাদককে মতবিনিময়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে আমন্ত্রিতদের মধ্যে দুজন বিদেশে অবস্থান করায় তারা বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি।
মন্তব্য করুন