কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আবাসন সংকট নিরসনে অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনার দাবি

বিআইপিতে ‘বাংলাদেশের নগর এলাকার আবাসন পরিকল্পনার সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। ছবি : সংগৃহীত
বিআইপিতে ‘বাংলাদেশের নগর এলাকার আবাসন পরিকল্পনার সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। ছবি : সংগৃহীত

প্রতিটি নাগরিকের আবাসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু আবাসনকে মৌলিক অধিকারের জায়গায় না রেখে পণ্যে রূপান্তর করা হয়েছে। এতে আবাসন ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে শুধুই বাণিজ্যিক। এর থেকে বের হয়ে নতুন গৃহায়ণ পরিকল্পনা দরকার, যা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ‘বাংলাদেশের নগর এলাকার আবাসন পরিকল্পনার সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ অভিমত তুলে ধরেন অংশীজনেরা।

বৈঠকে বিআইপির সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আমাদের আবাসন মডেল ঠিক করতে হবে। আমরা কি ইউরোপ থেকে কপি করব না কি আমাদের শেকড়ের সঙ্গে মিল রেখে আবাসন মডেল দাঁড় করাব, তা নির্ধারণ করা দরকার। আমাদের গ্রামীণ ব্যবস্থায় কেবল আবাসন নয়, একটা কমিউনিটি গড়ে উঠেছিল। পরবর্তী সময়ে মফস্বল ব্যবস্থাতেও মানুষ পাশের বাড়ির মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখত। কিন্তু নগরে এসে আমরা মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের সুযোগ কমে যেতে দেখলাম। এমন সব বহুতল ভবন তৈরি হয়েছে, যেখানে কোনও আলো-বাতাস ঢুকতে পারে না। সারাদিন লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়।

বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, শিক্ষা বা চিকিৎসা নিয়ে রাষ্ট্র যত কথা বলে, তত কথা আবাসন নিয়ে বলে না। কিন্তু বাসস্থান আমাদের মৌলিক অধিকার। অনেকেই বলেন, ড্যাপ একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা। পেশাজীবী আবাসন ব্যবসায়ীরা ড্যাপের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। রাষ্ট্র কি আবাসন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে চায়?

আবাসন পরিকল্পনা সংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ প্রকৌশলী আবু সাদেক। তিনি বলেন, দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। আমরা যারা নিজেদের সচেতন বলে দাবি করি, তারা গ্রামের মানুষদের নিয়ে কাজ করি না। আমরা মূলত ৪০ শতাংশের নগরের মানুষ নিয়েই কাজ করি। তাও পুরো নগরের সবাইকে নিয়ে কাজ করি না। খুবই ছোট গ্রুপ নিয়ে আমাদের কাজ। নগরের ৩০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে থাকে। বাকি ৬০ শতাংশের একটি বড় অংশ নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। এরাও আমাদের কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে না, আশপাশে থাকে। ধনী ৫-১০ শতাংশ মানুষকে নিয়েই আমাদের কাজ।

তিনি বলেন, আমি সংস্কারের কথা বলব না। কারণ সংস্কার তো হয় যখন পরিকল্পনা থাকে। আমাদের কোনও পরিকল্পনাই নাই। ফলে আমাদের একটা ভালো পরিকল্পনা দরকার। বস্তিতে ৪০-৫০ লাখ মানুষ থাকে। এদের বাদ দিয়ে কোনও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনা সম্ভব নয়। তাদের বাদ দিয়ে কাজ করলে কোনও লাভ হবে না।

প্রকৌশলী আবু সাদেক বলেন, আমাদের জাতীয় আবাসন পরিকল্পনা আছে, যা সংশ্লিষ্ট লোকজনই জানে না। এই পরিকল্পনা দিয়ে কিছু হবে না। সব পুরনো তথ্যে ভরা। এসব বাদ দিতে হবে।

বৈঠকে আমলাদের সমালোচনা করেন এনজিওকর্মী ফয়েজ উল্লাহ তালুকদার। তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমলারা। তাদের কাজ ছিল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। কিন্তু তারা হয়ে গিয়েছে পরিকল্পনাকারী। যাদের কোনও জানাবোঝা নাই, তারা পরিকল্পনা করছে। এজন্যই এই বিশৃঙ্খলা। পরিকল্পনা একটি আলাদা বিভাগ। সেখানে পরিকল্পনাকারীদের না নিয়ে অন্যদের নিয়ে গেলে কোনও লাভ হবে না।

তিনি বলেন, মৌলিক অধিকার আবাসনকে পণ্য হিসেবে হাজির করা হয়েছে। আমরা সাশ্রয়ী আবাসনের কথা বলি। মানে যত কম মূল্যে বাসা পাওয়া যায়। এই সুযোগে এখানে করপোরেটরা ঢুকেছে। এখন পুরোটাই একটা ব্যবসা। করপোরেটরা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারের সব পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রণ করছে।

বিআইপি সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় বৈঠকে বিআইপির বোর্ড সদস্য আবু নাইম সোহাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রাশেদা রহমান খানসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরানকে বোঝাতে চীনের দারস্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন হামলার পর তেহরানে লেবুর শরবত খাওয়ানো হচ্ছে

লন্ডন বৈঠক সম্পর্কে মিত্রদের জানাচ্ছে বিএনপি

চীনের পথে বিএনপির প্রতিনিধি দল

রুয়েট শিক্ষার্থীরা পাবেন লক্ষাধিক টাকার স্বাস্থ্যসেবা

এবার সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেপ্তার

ফের সুখবর পেলেন প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা

সাবেক সিইসি লাঞ্ছিত : জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা

আন্দোলন দমাতে কর্মকর্তাদের বিধিবহির্ভূত বদলি করছে এনবিআর

ময়মনসিংহে চুরি-ছিনতাই-চাঁদাবাজি বন্ধে বিক্ষোভ

১০

ছাত্রলীগ কর্মীকে নিয়ে জিয়ার মাজারে ছাত্রদল নেতা, কারণ দর্শানোর নোটিশ

১১

রাশিয়া কেন ইরানকে রক্ষা করছে না?

১২

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি, মার্কিন স্বীকারোক্তি

১৩

বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ছে বাকৃবি

১৪

ডিবি হেফাজতে নুরুল হুদা, ‘ভুয়া নির্বাচন’ নিয়ে করা হবে জিজ্ঞাসাবাদ

১৫

নেত্রকোনায় ব্যবসায়ীকে ছাত্রদল নেতার হুমকি

১৬

লোডশেডিংয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা অন্ধকারে

১৭

নারী-পুরুষের মধ্যে ‘শুধুই বন্ধুত্ব’- আসলে কতটা সম্ভব?

১৮

আলজেরিয়ায় স্টেডিয়ামে শিরোপা উৎসবে প্রাণ গেল ৩ সমর্থকের

১৯

ধাক্কা দিলেই বিএনপি ভেঙে পড়বে, এটি ভাবার কারণ নেই : ডা. জাহিদ

২০
X