কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২০ এএম
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘শতকোটি টাকা চাই না, শুধু ছেলেকে বুকে ফেরত চাই’

‘শতকোটি টাকা চাই না, শুধু ছেলেকে বুকে ফেরত চাই’
শহীদ আমিনের মা সেলিনা বেগম ও শহীদ আমিনুল ইসলাম আমিন। ছবি : সংগৃহীত

মা তুমি কান্না করবা না। তুমি কান্না করলে তোমার চোখের পানি আমার ভালো লাগে না। কান্না করলে ঠিক বলেই মাকে সান্ত্বনা দিতেন আমিনুল ইসলাম আমিন।

এখন বুক ফেটে কান্না করলেও কেউ বলে না,‘মা তুমি কান্না করবা না, তোমার কান্না আমার ভালো লাগে না’। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন শহীদ আমিনের মা সেলিনা বেগম (৪০)।

বলছিলাম পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামের অটোরিকশাচালক মো. ওবায়দুল ইসলাম (৪৫) ও তার স্ত্রী সেলিনা বেগমের একমাত্র সন্তান শহীদ আমিনুল ইসলাম আমিনের কথা।

গত ২১ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ির দনিয়া এলাকার গোয়ালবাড়ির মোড়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন কিশেরা আমিন(১৬)।

শহীদ আমিনের মা বলেন, যাত্রাবাড়ির দনিয়া এলাকার এ কে স্কুল এ্যান্ড কলেজের পাশে একটি ভাড়া বাসায় আমরা থাকি। আমাদের একমাত্র সন্তান আমিন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে আমিন। এরপর অভাবের তাড়নায় আর পড়াশোনা করতে পারেনি সে। চাকরি নেয়েছিল একটি কারখানাতে। মাসে আট হাজার টাকা বেতন পেত আমার ছেলে।

সেলিনা বেগম বলেন, ২১ জুলাই শহীদ হওয়ার দিন সকালে আমিন আমাকে বলেছিল, মা আজ কাজে যাবো না। শরীরটা ভালো লাগছে না। পরে সারাদিন ঘুমিয়ে বিকেলে নাস্তা করার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

আমিন আসলে তার মাকে না জানিয়ে শনির আখড়ায় আন্দোলনে গিয়েছিল। সেখানে আমিনসহ সাতজন পুলিশের গুলিতে আহত হয়।

আমিনে মা আরও বলেন, খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। আমিনকে দুইজন ছাত্র অনাবিল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার ডাক্তাররা তাদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেন।

তখন ওই ছাত্ররা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নিতে একটি অটোরিকশা ডাকেন। গুরুতর আহত আমিনকে রিকশায় তুলতে গিয়ে দেখেন চালক আর কেউ নন, শহীদ আমিনের বাবা ওবায়দুল ইসলাম। এ সময় ছেলেকে গুলিবিদ্ধ দেখে কান্নায় আকাশ-পাতাল ভারী করেন কিশোর আমিনের বাবা। নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেলে। সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মসজিদ থেকে টাকা তুলে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দাফনের উদ্দেশ্যে শহীদ আমিনকে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাজায় অসংখ্য লোক শরিক হন। আমিনের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউ।

বাউফলের ভরিপাশায় দাদার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ আমিনুল ইসলাম আমিন।

শহীদ আমিনের মা বলেন, কারখানায় কাজের ফাঁকে ফুটবল খেলত সে। প্রতি শুক্রবার বাড়ির পাশের মাঠে ফুটবল খেলতে যেত। খেলাধুলা করে অনেক পুরস্কারও পেয়েছিল। ছেলের অর্জিত পুরস্কার হাতে নিয়ে চুমু খেয়ে কান্না করতে করতে আমিনের মা আরও বলেন, ‘এখন আমার আমিন নেই, কে খেলবে ফুটবল আর কে আনবে পুরস্কার? কে আমাকে মা বলে ডাকবে? আমার কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে। আমি শতকোটি টাকা চাই না। আমার ছেলেকে আমার বুকে ফেরত চাই।’

শহীদ আমিনের প্রতিবেশী মিতু বেগম (৬০) বলেন, আন্দোলনে যাওয়ার সময় আমিন বলেছে আমার যদি এখানে মৃত্যু হয় তাহলে আমি শহীদ হব। আমি রাগ করেই তাকে বলেছি ওসব ঝামেলায় যাবে না। কিন্তু সে আমাকে বলল, এত টেনশন কর কেন নানি। আমার এখানে মৃত্যু হলে আমি শহীদ হব। আমার জন্য টেনশন করবা না।

শহীদ আমিনের বাবা ওবায়দুল হাসান (৪৫) বলেন, একমাত্র সন্তান হারিয়ে বুকটা খালি হয়ে গেছে। আমার আদরের ধন আমিনের হত্যাকারীদের বিচার চাই। শেখ হাসিনাকে হুকুমের আসামি করে বিচারের দাবি জানাই সরকারের কাছে। যাত্রাবাড়ী থানায় ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২৪ নভেম্বর : আজকের রাশিফলে কী আছে জেনে নিন

কাকে শাস্তি দিতে চান হুমা কুরেশী?

ঢাকা ছাড়লেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

যুবদল নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

জবি শিক্ষার্থীদের বাস সেবা দিতে চায় শিবির, অনুমতি দেয়নি কমিশন

ইউক্রেন শান্তি চুক্তি আলোচনায় বড় অগ্রগতি

এসএসসি পাসে মীনা বাজারে চাকরির সুযোগ

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টা

পুরুষদের প্রস্টেট চেক করানো কেন জরুরি

১০৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৫২ জনের গণশুনানি

১০

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, দ্বিতীয় ঢাকা

১১

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হওয়া ছাড়া উপায় নেই : ইরান

১২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুপক্ষের সংঘর্ষ, টেঁটাবিদ্ধে বৃদ্ধ নিহত

১৩

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১৪

হুমকির মুখে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জাতীয় গ্রিড লাইন

১৫

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার পদত্যাগ

১৬

আজ ঢাকার আবহাওয়া যেমন থাকতে পারে

১৭

আড়ং ডেইরিতে নিয়োগ, দ্রুত আবেদন করুন

১৮

২৪ নভেম্বর : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

১৯

নাশতায় যেসব খাবার নীরবে বাড়াচ্ছে আপনার রক্তচাপ

২০
X