কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

স্বাধীন দেশেও আমরা লজ্জিত : সাখাওয়াত হোসেন

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে 'গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড' প্রদান অনুষ্ঠান । ছবি : কালবেলা
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে 'গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড' প্রদান অনুষ্ঠান । ছবি : কালবেলা

শ্রম ও কর্মসংস্থান ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি না দেওয়ায় আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। এটা আমাদের জন্য লজ্জার।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে 'গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড' প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এবছর গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে দেশের ৩০ প্রতিষ্ঠান।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এবং বিশেষ অতিথি শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান। এই ক্যাটাগরিতে ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আজ যারা পুরস্কার পেয়েছেন তারা একক দক্ষতায় পাননি। মালিক-শ্রমিক মিলে সবার প্রচেষ্টায় এই পুরস্কার পেয়েছেন। তবে শ্রমিকদের ঘাম শুকানোর আগেই যেন পারিশ্রমিক দিতে হয়। কারণ পারিশ্রমিকের বিষয়ে আমাদের ধর্মেও বলা আছে। যারা শিল্প উদ্যোক্তা আছেন কর্মপরিকল্পনায় আছেন শ্রমিকদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করা এটা তাদের দায়িত্ব। শ্রমিকরা শ্রম দিতে গিয়ে কোনো কোনো সময় জীবনও দিচ্ছেন। শ্রমিকরা যদি কাজ না করতেন তাহলে আজকে এই অবস্থায় এসে পৌঁছাতেন না ‌‌।

তিনি বলেন, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত প্রোডাকশন দিতে গিয়ে বসে পড়ছে। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক নয়।

এ দেশের শিল্পায়নের বয়স বেশি না উল্লেখ করে সরকারের উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশে শিল্পায়নের বয়স বেশি না; স্বাধীনতার আগে এবং পরে শিল্পায়ন ছিল না।

শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের উদ্দেশে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত কয়েক মাসে বহু জায়গায় জবাবদিহিতায় ছিলাম। শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। আমাকে নিজেকে খুব ছোট মনে হলো। প্রতিটি জায়গায় একটা জবাবদিহি করতে হচ্ছে। আমাদের দেশে শ্রমিকদের এটা হচ্ছে, ওটা হচ্ছে, এটা হওয়ার কথা ছিল, হয়নি এসব বিষয়ে। আমি নিজেকে ভাবছিলাম আমি কিছু একটা, এখন দেখি কিছুই না।

তিনি আরও বলেন, আজকে স্বাধীন দেশে এসে লজ্জিত‌। কেন একটি অর্গানাইজেশনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের অনুরোধ করতে হচ্ছে, ভাই আমাদের একটু সময় দাও সব ঠিক করে দিচ্ছি। এটা করার কারণ হচ্ছে বিশেষ করে আমাদের দেশের শিল্পপতিরা যারা অর্গানাইজেশনের সদস্য হন। তাদের ওখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার। তারা রাষ্ট্রক্ষমতা গিয়ে এমপি-মন্ত্রী হবেন ইনভেস্টর হবেন। এই প্রত্যেক ইনভেস্টর তারা বলেন আমরা এটা করেছি, ওখানে ওইটা করেছি , এখানে বড় ইনভেস্ট করেছি ইন্ডাস্ট্রি করেছি, সেটা এফবিসিসিআই হোক, বিজিএমই হোক। কিন্তু তারা শ্রমিকদের জন্য কিছুই দেখেন না। না দেখার কারণে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে আজ আমরা এসে দাঁড়িয়েছি। যার কারণে তাদের (বিশ্ব শ্রমিক অর্গানাইজেশন) ডেকে আমাদের বলতে হয়, ভাই আমরা এটা করেছি, ওটা করেছি এসে দেখে যান। সিনিয়র নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের জন্য লজ্জার। যারা মালিকপক্ষ আছেন তাদের বলব, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদান করেন ঠিকমতো।

গত বছরের তুলনায় এবছরের নতুন পাঁচটি সেক্টরে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ বছর ১৬টি শিল্প সেক্টরের ৩০ (ত্রিশ) টি কলকারখানাকে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে। নিরাপদ ও শোভন কর্মপরিবেশে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ শ্রমশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আরও অধিক পরিমাণে উৎপাদন নিশ্চিত করে দেশের অর্থনীতির গতিকে বেগবান ও টেকসই করার মাধ্যমে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্বুদ্ধকরণে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রণীত নীতিমালার আওতায় শ্রমমান সম্পর্কিত কিছু নির্ণায়ক মাপকাঠি যেমন—অপরিহার্য প্রতিপালন, পরিবেশগত প্রতিপালন, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিপালন, উদ্ভাবনী কার্যক্রম ইত্যাদি বিবেচনা করে ১৬টি শিল্প সেক্টরের ৩০ (ত্রিশ)টি কলকারখানাকে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড জন্য নির্বাচন করা হয়।

গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—

তৈরি পোশাক (নিট)-৩টি :

১. চরকা টেক্সটাইল লি., কাজিরচর, ডাংগা, পলাশ, নরসিংদী।

২. ইকোটেক্স লি., চান্দরা, পল্লীবিদুৎ, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।

৩. ফকির ফ্যাশন লিমিটেড, ডহরগাঁও, বালিয়াপাড়া, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

তৈরি পোশাক (ওভেন)-০৩টি :

৪. তারাসিমা অ্যাপারেলস লি., গোলড়া, কৈট্টা, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ।

৫. অকো-টেক্স লি., দক্ষিণ পানিশাইল, জিরানীবাজার, গাজীপুর।

৬. স্কয়ার ফ্যাশন লি., জামিরদিয়া, হবিরবাড়ী, ভালুকা, ময়মনসিংহ।

টেক্সটাইল-০৪টি :

৭. আকিজ টেক্সটাইল মিলস লি., গোলরা, চরকান্দা, মানিকগঞ্জ।

৮. পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেড, হরিতলা, শাহপুর বাজার, মাধবপুর, হবিগঞ্জ

৯. কে ডি এস টেক্সটাইল মিলস লি. (ইউনিট-০২), মোহরা শিল্প এলাকা, চান্দার, চট্টগ্রাম।

১০. ফোর এইচ ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং লি., আরাকান রোড, চাপড়া, কালারপোল, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিজ-০১টি :

১১. প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বাড়বকুণ্ড, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম।

ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স পণ্য প্রস্তুতকারক ইন্ডাস্ট্রিজ-০৩টি :

১২. ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড, ঘাশিরদিয়া, শাষপুর, শিবপুর, নরসিংদী।

১৩. ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড, কামারগাঁও, পুটিয়া, শিবপুর, নরসিংদী।

১৪. ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পি এল সি, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।

অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ কারখানা-০১টি

১৫. সবজি ট্রিমস লি., ডাউটিয়া, কালামপুর, ধামরাই, ঢাকা।

১২ অ্যাওয়ার্ড ২০২৫

খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা (ফুড অ্যান্ড বেভারেজ)-০২টি:

১৬. আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লি., বারবাড়িয়া, ধামরাই, ঢাকা।

১৭. হবিগঞ্জ এগ্রো লি., অলিপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ।

চা শিল্প-০২টি :

১৮. জেরিন চা বাগান, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।

১৯. মির্জাপুর চা বাগান, মির্জাপুর, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।

চামড়া শিল্প (ফিনিশড গুডস)-০১টি :

২০. সুনিভার্স ফুটওয়্যার লি., ওয়ার্ড নং-০৯, হবিরবাড়ী ভালুকা, ময়মনসিংহ।

জুট মিল-০১টি :

২১. কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড, ডেইরিফার্ম রোড, রবার্টসনগঞ্জ, রংপুর।

টাইলস অ্যান্ড সিরামিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ-০১টি :

২২.এক্স সিরামিক্স লি., বাহেরার চালা, গিলাবেরাইদ, শ্রীপুর, গাজীপুর।

প্রসাধনী কারখানা-০২টি :

২৩. রিমার্ক এইচবি লিমিটেড, বাউশিয়া, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ।

২৪. স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড, ৯৯৫ উত্তর রূপসী, তারাব পৌরসভা, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ-০১টি :

২৫. এস কে এফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, দুইব রোড, টঙ্গী শিল্প এলাকা, টঙ্গী, গাজীপুর।

শিপ বিল্ডিং অ্যান্ড শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ-০৩টি :

২৬.পি এইচ পি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, শীতলপুর, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম।

২৭. খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, খুলনা, মতিয়াখালী, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, খুলনা সদর, খুলনা

২৮. কে আর শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম।

সিমেন্ট কারখানা-০১টি :

২৯. সেভেন সার্কেল (বাংলাদেশ) লি., চরমিরপুর, কালীগঞ্জ, গাজীপুর।

স্টিল মিল-১টি :

৩০. বিএসআরএম স্টিলস লি.,ফৌজদারহাট, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন

এবার তিশার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে

আইটেম গানে শাকিবের নায়িকা, সমালোচনার কড়া জবাব

বিপিএল: বিদেশি লেগস্পিনারকে দলে ভেড়াল চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বন্দরের ৩ প্রবেশপথ অবরোধ

এক লাফে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ শহরে উঠে এলো ঢাকা

পেছাতে পারে জকসু নির্বাচন, প্রার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

রশির সূত্র ধরে যেভাবে বেরিয়ে এলো শিশু জায়ান হত্যার রহস্য

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের তুমুল সংঘর্ষে আহত ২৭

ভূমিকম্পপ্রবণ ঢাকা হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর

১০

তপশিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভালো হবে : সিইসি

১১

জামায়াতের মনোনয়ন পেলেন আলোচিত ড. ফয়জুল হক

১২

তৌসিফের নায়িকা মিস ওয়ার্ল্ড নীলা, পর্দায় আসছে নতুন জুটি

১৩

এবার নিজেকে ‘গার্ডিয়ান অব চিটাগাং’ ঘোষণা শাহজাহান চৌধুরীর

১৪

বার্সাকে উড়িয়ে দিল চেলসি, লেভারকুসেনে ‘স্তব্ধ’ সিটি

১৫

স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ, ১৪ বছরের সংসারের ইতি টানলেন সেলিনা

১৬

লক্ষ্মীপুরে বাসে আগুন

১৭

আজ কী আছে ভাগ্যে, জেনে নিন রাশিফলে

১৮

জানা গেল কবে বিয়ে করবেন রোনালদো, কোথায় হবে অনুষ্ঠান

১৯

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে নতুন অধ্যায় শুরু করতে প্রস্তুত ফ্রান্স

২০
X