কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪১ পিএম
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন হবে কীভাবে, বললেন আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। ছবি : সংগৃহীত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। ছবি : সংগৃহীত

স্থানীয় সরকারে সংসদ সদস্যদের প্রভাব কমানো, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। শুক্রবার (৮ আগস্ট) কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় ২০টি মৌলিক কাঠামোগত বিষয়ের মধ্যে ১১টিতে সম্পূর্ণ ঐকমত্য হয়েছে, তবে ৯টি বিষয়ে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) রয়েছে। কমিশনের মেয়াদ মধ্য আগস্টে শেষ হচ্ছে এবং সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়েও জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি।

আলী রীয়াজ বলেন, স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় সংসদ সদস্যদের প্রভাব বিস্তার আইনত বৈধ নয় এবং এ বিষয়ে আদালতের রায়ও রয়েছে। প্রথম ধাপের আলোচনায় ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল, যার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের প্রভাব রোধে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব ছিল। এই প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে।

সংস্কার কমিশনের মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, কেবল প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য নয়, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে না থাকা ও মেয়াদের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যদিও কিছু বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তবে এগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ রোধ করা। এটি কেবল সাংবিধানিক পরিবর্তন নয়, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি বড় পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করবে।

জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের কাজ হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে জুলাই সনদের একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত এই সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

জুলাই সনদ কবে নাগাদ সই হতে পারে, এমন প্রশ্নে সহসভাপতি বলেন, কবে নাগাদ জুলাই সনদ, সেটা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনার তৃতীয় পর্বে, বিশেষত বিশেষজ্ঞদের মতামত পাওয়ার পর। আমরা যেটা বলেছি। প্রাথমিক একটা খসড়া দেওয়া হয়েছে সবাইকে, সে খসড়া অনুযায়ী তারা মন্তব্য করেছে। খসড়া থেকে এসব মন্তব্যের ভিত্তিতে সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া আবার পাঠাব আগামী দুদিনের মধ্যে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সবাই একমত হয়ে স্বাক্ষরের দিন-তারিখ ঠিক করা যাবে। যদি অন্য কোনো মতামত থাকে, তাহলে বিবেচনায় নিতে হবে।

সনদ অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করবে নাকি আগামী সংসদকে বাধ্যবাধকতার মধ্যে রাখা হবে, এমন প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা যেটা বলেছি, বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রশ্ন করা যে এটা বাস্তবায়নের পথ কী হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানেরও বিষয় রয়েছে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর নির্ভর করবে, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ওপর নির্ভর করবে বাস্তবায়নের পথটা কী হবে। কোনো পূর্বনির্ধারিত অবস্থান থেকে বাস্তবায়নের কোনো পথ ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ করছে না। সেটাই আমাদের অবস্থান।

তৃতীয় ধাপের সংলাপ দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্বল্পতম সময়ে আলোচনাটা এ পর্যায়ে করতে চাই। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ, তাদের মতামতের ভিত্তিতে এবং রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের অবস্থান জানে। সেগুলোর ভিত্তিতে এক জায়গায় আসা যায় কি না, সে চেষ্টা করব আমরা। সেটা খুব দীর্ঘমেয়াদি হবে না।

ঐকমত্য কমিশন তাদের কার্যক্রমকে সফল হিসেবে জানি সহসভাপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। প্রথম ধাপে ৬২টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ১৯টির মধ্যে ১০টি বিষয়ে পুরোপুরি ঐকমত্য হয়েছে।

এ সময় তিনি এটিকে দেশের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে একটি বড় অর্জন হিসেবে উল্লেখ করেন।

কমিশনের মেয়াদ মধ্য আগস্টে শেষ হলেও সরকার চাইলে এর মেয়াদ বাড়াতে পারে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ জানান, কমিশন আলাদাভাবে মেয়াদ বাড়ানোর কোনো সুপারিশ করবে না। তবে যদি আগামী সাত দিনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা না যায়, তাহলে বাস্তব পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

কমিশনের আর্থিক ব্যয় সম্পর্কে তিনি জানান, কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করেছে এবং তাদের সাচিবিক সহায়তা আইন মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয় থেকে দেওয়া হয়েছে। এ-সম্পর্কিত যাবতীয় খরচ তাদের কাছেই হিসাব করা রয়েছে।

৯টি বিষয়ে ভিন্নমত থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নোট অব ডিসেন্টকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও দেশের বাস্তবতার আলোকে সমাধানের পথ খোঁজা হবে। সংখ্যাগুরু দলের ঐকমত্যের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের মতামতকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। এমন কিছু বিষয় ছিল, যেগুলো নিয়ে মাসের পর মাস আলোচনা করলেও ঐকমত্যে আসা সম্ভব ছিল না, তাই বাস্তবতার নিরিখে সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।

কমিশন সহসভাপতি মনে করেন, কেবল একটি নির্বাচন ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পুনরুত্থান বন্ধ করতে পারবে না। এর জন্য একাধিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, সাংবিধানিক বিধি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রয়োজন। দেশের সব নাগরিক যেমন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চান, তেমনি এই সংস্কার পদক্ষেপগুলো দেশকে একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি।

প্রথম পর্বের আলোচনায় দেখা গেছে, সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া সুপারিশগুলোর ভেতরে ২৫টি সুপারিশের ব্যাপারে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য এতটাই ব্যাপক যে, এসব বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতির সম্ভাবনা নেই। সেই বিবেচনায় কমিশন দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা থেকে বেশ কিছু বিষয় বাদ দেয়।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের মেয়াদ কমিয়ে চার বছরে করা; বাংলাদেশকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করা; সংবিধানের প্রযোজ্য ক্ষেত্রগুলোতে রিপাবলিকের বাংলা হিসেবে ‘নাগরিকতন্ত্র’ এবং People’s Republic of Bangladesh-এর অনুবাদ হিসেবে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ব্যবহার করা; রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক নিম্নকক্ষের মোট আসনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ আসনে তরুণ-তরুণীদের মধ্য থেকে প্রার্থী মনোনীত করা; সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করা; একটি স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করা; জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য যেমন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রয়েছে, তেমনিভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের নিয়ে একটি করে জেলা নাগরিক কমিটি ও উপজেলা নাগরিক কমিটি গঠন করা; দেশের পুরোনো চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করা; বিদ্যমান জেলা পরিষদ ব্যবস্থা বাতিল করে জেলা পরিষদগুলোর সব সম্পত্তি প্রস্তাবিত প্রাদেশিক সরকারের কাছে হস্তান্তর করা; প্রস্তাবিত প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশের আলোকে ঢাকা মহানগরী, টঙ্গী, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে প্রাদেশিক সরকারের সমপর্যায়ের ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ গঠন করা; উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বিলুপ্ত করা; পৌরসভার চেয়ারম্যান ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটে নির্বাচন করা এবং মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস), সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মন্ত্রীদের অভিপ্রায় অনুসারে সিভিল সার্ভিসের বাইরে থেকে নিয়োগ করা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাতসকালে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে অভিভাবকদের মানববন্ধন

খাগড়াছড়িতে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

প্রচণ্ড মাথাব্যথা দূর করতে যা করবেন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন

রাউটার চালালে মাসে কত টাকা বিদ্যুৎ খরচ হয় জেনে নিন

বন্ধ করা হলো কাপ্তাই বাঁধের ১৬ জলকপাট

হাসপাতাল থেকে আজ বাসায় ফিরবেন জামায়াত আমির

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যে ৫ সমঝোতা স্মারক

সময় না থাকলেও পুরুষদের জন্য কেন ব্যায়াম করা জরুরি

নিউটনের সূত্র ভুল দাবি করলেন পঞ্চগড়ের আফসার

১০

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১১

আজ আন্তর্জাতিক যুব দিবস

১২

১২ আগস্ট : আজকের রাশিফলে কী আছে জেনে নিন

১৩

জেলেনস্কিকে মোদির ফোন, যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা

১৪

কারও শরীরে পা লাগলে হাত ‍দিয়ে ছুঁয়ে সালাম করা কি জায়েজ?

১৫

সাংবাদিক তুহিনের ময়নাতদন্ত : গলা, বুক ও পিঠে ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন

১৬

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

১৭

ফিলিস্তিনের পক্ষে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বড় সিদ্ধান্ত, সৌদির প্রতিক্রিয়া

১৮

আলাস্কায় হতে পারে ইউক্রেন ভাগাভাগি, দানা বাঁধছে সন্দেহ

১৯

কেমন থাকবে আজ ঢাকার আবহাওয়া

২০
X