সাবেক সচিব মরহুম শাহ আব্দুল হান্নান ও সরকারের সাবেক কর্মকর্তা মরহুম এ জেড এম শামসুল আলমের জীবনাদর্শ শীর্ষক স্মৃতিচারণ সভা করেছে সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিস (সিপিএস) ও বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষা সোসাইটি।
শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘আদর্শ সমাজ ও প্রশাসন পরিচালনায় মরহুম শাহ আব্দুল হান্নান এবং মরহুম এ জেড এম শামসুল আলমের জীবনাদর্শ’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষা সোসাইটি ও সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিস-সিপিএসের সভাপতি আবদুস শহীদ নাসিম।
সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষা সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি মেজর (অব.) আবদুস সালাম সরকার, প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শারমিন ইসলাম ও বাংলাদেশ কো-অপরাটেভ বুক সোসাইটি লিমিটেডের প্রকাশনা ম্যানেজার ওয়াসিম আকরাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব আহমদ, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি মো. আবদুল মান্নান, বুয়েটের অধ্যাপক ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আবু সাইদ এম আহমেদ, ড. নাসিমা হাসান, ড. মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম, ডা. আবু খলদুন আল মাহমুদ, ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন সিপিএস’র জেনারেল সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান এবং বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষা সোসাইটির সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি আরশাদ মঞ্জুর চৌধুরী।
সভায় বক্তারা বলেন, মরহুমদ্বয় শুধু সৎ, যোগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ প্রশাসনিক কর্মকর্তাই ছিলেন না; বরং রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইসলামী অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অসামান্য অবদান রয়েছে। তারা উভয়েই খ্যাতিমান লেখক ছিলেন। তারা তাদের পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে আগামীতে সুখী, সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তাদের রচনাবলি দেশ ও জাতির জন্য এক মহামূল্যবান সম্পদ। মূলত, তাদের দিকনির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারলেই সুখী, সমৃদ্ধ নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। তিনি দেশ ও জাতির জন্য মরহুমদ্বয়ের অবদান স্বীকৃতি তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, মরহুম শাহ আবদুল হান্নান ও মরহুম শামসুল আলমের মতো ব্যক্তিত্বরা সবসময় জন্মান না; বরং এজন্য শতাব্দীর পর শতাব্দী অপেক্ষা করতে হয়। তারা তাদের কর্মজীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন এবং নীরবে-নিভৃত্বে মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। তারা আমাদের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবেন যুগ থেকে যুগান্তরে। তিনি মরহুম দ্বয়ের অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করতে নতুন প্রজন্মকে শপথ গ্রহণের আহ্বান জানান।
ড. শারমিন ইসলাম তার প্রবন্ধে বলেন, এক শ্রেণির মানুষ আছেন যারা তাদের সময়ের তুলনায় অনেক বেশি অগ্রসর এবং সমাজের যা কিছু অসংগতি আছে তা তাদের নাড়া দেয় প্রবলভাবে। মানুষের ক্লান্ত, অবদমিত আত্মচেতনাকে আলোকস্পর্শে জাগিয়ে তোলাই যেন তাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য। মরহুম শাহ আব্দুল হান্নান এমনই একজন ব্যক্তি, এমনি এক বিরল প্রতিভা, যা কোনো জাতি শতাব্দীতে একটা দুটো পায় বলে আমার মনে হয়।
প্রবন্ধে ওয়াসিম আকরাম বলেন, ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও আমি একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।’ আর আমি বলব, ‘আমাকে একজন সৎ মানুষ দাও আমি একটি আদর্শ সমাজ উপহার দেব।’ আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠায় এমনই একজন সৎ, নীতিবান ও আদর্শিক মানুষ ছিলেন এ জেড এম শামসুল আলম। যিনি একাধারে বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, লেখক, গবেষক, প্রকাশক, ইসলামী চিন্তাবিদ, সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তকসহ পরিপূর্ণ একজন ধর্মভীরু ও আধ্যাত্মিক মানুষ ছিলেন। জীবনভর সুন্দরের সাধনা করেছেন।
মন্তব্য করুন