রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা যেভাবে জুলাই জাতীয় সনদ করলাম, তেমনি আপনারা রাজনৈতিক নেতারা বসে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিন, কীভাবে নির্বাচন করবেন। যেমন-তেমন করে নির্বাচন করলে তো আবার পুরোনো জায়গায় ফিরে যাব। এত কিছু করে তাহলে লাভটা কী হলো?
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আজ আমরা যে ঐক্যের সুর বাজিয়েছি, সেই ঐক্যের সুর নিয়েই নির্বাচনের দিকে যেতে চাই। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে এই ঐক্য যেন বজায় থাকে।’
ড. ইউনূস বলেন, এই সনদের মাধ্যমে আমরা আরেকটা বড় কাজ করলাম। আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় এলাম। আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম, যেখানে আইন-কানুন ছিল না। মানুষের যা ইচ্ছা তা করতে পারত। এখন আমরা সভ্যতায় এলাম এবং এমন সভ্যতা আমরা গড়ে তুলব, মানুষ বিস্ময় চোখে আমাদের দেখবে। কাজেই সেটা এখন আমাদের পরবর্তী জীবন— এই সনদ-পরবর্তী জীবন আমরা কীভাবে গঠন করব, তার ওপর নির্ভর করবে।
তর্কবিতর্কের অবসান হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আমরা আমাদের যে সম্পদ আছে, যেটা আমরা ব্যবহার করতে পারিনি। আমি বারবার যেটার কথা উল্লেখ করি, এটা হলো বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগর আমাদেরই অঞ্চল, আমাদেরই বাংলাদেশের অংশ। কোনো দিন আমরা খেয়াল করে দেখি নাই এই অংশে আমরা কী করি। এই অংশ অত্যন্ত সম্পদশালী অংশ। আমরা বলছি যে এটা আমরা পূর্ণ ব্যবহার করতে চাই, সম্পদকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমরা আর তর্কবিতর্কের মধ্যে থাকতে চাই না। সে জন্যই আজ সনদ হলো। এই সনদ তর্কবিতর্কের অবসান করবে। আমরা নিয়মমতো চলে যাব। আমরা এখন নিয়মমাফিক চলার জন্য তৈরি হয়েছি।
সমুদ্রবন্দরের সুবিধা নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমি বারবার বলছি যে আমরা যদি সমুদ্রবন্দর করে দিই, তাহলে সারা দুনিয়ার জাহাজ আমাদের বন্দরে ভিড়তে বাধ্য হবে। আমাদের পণ্য সিঙ্গাপুরে খালাস করে দিয়ে চলে যেতে হবে না। অন্য দেশের পণ্য সিঙ্গাপুরে খালাস করে দিয়ে যেতে হবে না। আমার দুয়ার পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারবে এবং অন্যান্য দেশের যারা সুযোগ দিতে পারবে না, তাদের পণ্য এখানে দেওয়া যাবে। আমাদের এখান থেকে তারা নিয়ে যাবে। কাজেই এটা একটা বিরাট সুযোগ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের পরিকল্পনায় যদি আমরা মাতারবাড়ি, কক্সবাজার, মহেশখালী সবকিছু মিলিয়ে একযোগে বন্দর উন্নত করি, তাহলে পুরো এলাকা নতুন সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে। এটা নির্ঘাত। এটার থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবে না। সব দেশের মানুষ এখানে আসবে। আমরা আমাদের অর্থনীতির অংশ হিসেবে আঞ্চলিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারি। আমরা নেপালে, ভুটানে, সেভেন সিস্টারসে তাদের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি শুধু এই বন্দরের কারণে, এই যোগাযোগের কারণে। তারাও সমৃদ্ধ হবে, আমরাও সমৃদ্ধ হব। কাজেই এই সুযোগগুলো আছে, যদি আমরা পথমত ঠিকমতো চলতে পারি।
মন্তব্য করুন