বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অতিমাত্রায় প্রকল্পনির্ভর সংস্কৃতির কারণে তাদের মূল কাজ নিয়মিত ও নিরপেক্ষ পরিসংখ্যান প্রণয়ন থেকে বিচ্যুত হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প সংস্কৃতি বিবিএসের মূল কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিয়েছে। মাঠপর্যায়ের জরিপ দুর্বল হয়েছে, তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ের গুণগতমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর সদর দপ্তরকেন্দ্রিক কাজের প্রবণতা বেড়েছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) প্রকাশিত বিবিএসের জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। পরিসংখ্যান দিবস উপলক্ষে বিবিএস আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই টাস্কফোর্স প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা, জটিল আমলাতান্ত্রিক কাঠামো এবং বহিরাগত অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা বিবিএসের ডেটা প্রকাশের সংস্কৃতি বিলম্বিত ও বিকৃত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বিবিএস এমন এক প্রকল্পনির্ভর সংস্কৃতির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতিশক্তি দুর্বল করেছে, অস্বাস্থ্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করেছে এবং সদর দপ্তরকেন্দ্রিক কর্মপদ্ধতির ফলে মাঠপর্যায়ে দুর্বলতা তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৬-০৭ অর্থবছরের দিকে তহবিল অনিশ্চয়তার কারণে বিবিএসকে দাতা-নির্ভর হতে হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই নির্ভরতা প্রকল্প সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। এই সংস্কৃতি ‘ডেটা সাইলো’ তৈরি করেছে, বহিরাগতভাবে চাপানো পদ্ধতি চালু করেছে এবং ব্যুরোর বাজেট ব্যবস্থায় অদক্ষতা ও অপচয় বাড়িয়েছে।
টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান জানান, বিবিএসকে একটি আধুনিক, পেশাদার ও স্বাধীন জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থায় রূপান্তরিত করতে হলে প্রকল্পনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে একটি স্থায়ী কাঠামো ও নীতিগত সংস্কার প্রয়োজন।
পরিসংখ্যান ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ (SID) ২৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে আট সদস্যের একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ টাস্কফোর্স গঠন করে। এর দায়িত্ব ছিল বিবিএসের মান, স্বচ্ছতা, জরিপ পদ্ধতি ও সাংগঠনিক সক্ষমতা পর্যালোচনা করে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবিএস রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারি পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন তথ্য প্রকাশে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রভাব পড়ছে। এতে ডেটার নির্ভরযোগ্যতা ও সময়োপযোগিতা ব্যাহত হচ্ছে। টাস্কফোর্স বলেছে, একটি বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা (NSO) আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার মূলভিত্তি। এটি সরকারের প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণ, জবাবদিহিতা, সম্পদের কার্যকর বরাদ্দ ও সামাজিক আলোচনা সচল রাখতে সহায়তা করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, “সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর আস্থা তখনই তৈরি হবে, যখন তা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে পেশাদার ও স্বচ্ছভাবে তৈরি হবে।
টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশে বলা হয়েছে, পরিকল্পনা উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি টাস্ক টিম গঠন করা হোক, যারা প্রতিবেদন বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও গতিশীল করবে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা আশা করি, এই বিশ্লেষণ ও সুপারিশগুলো বিবিএসকে একটি সত্যিকারের শক্তিশালী ও স্বাধীন পরিসংখ্যান সংস্থায় পরিণত করবে, যা রাষ্ট্র ও নাগরিক উভয়েরই কল্যাণে কাজ করবে।
মন্তব্য করুন