বাংলাদেশে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মানবাধিকার রক্ষা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট (ইইউপি) চূড়ান্ত প্রস্তাব পাস হচ্ছে আজ। ইতিমধ্যে ২০২৪ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানসম্মত পর্যবেক্ষককে রাখার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভোটাভুটি ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এক যৌথ প্রস্তাবে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চর্চার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণের আহ্বানও জানিয়েছে এই পার্লামেন্ট।
এ ছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, মানবাধিকারকর্মী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাজের নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে ইইউপির বিবৃতিতে।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে প্রস্তাবটি নিয়ে পার্লামেন্ট অধিবেশনের বিতর্কে ৬ সদস্য অংশ নেন।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্য ডানপন্থি, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট, বামপন্থিসহ সাতটি গ্রুপ এই প্রস্তাব এনেছে। প্রস্তাবে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অত্যধিক বল প্রয়োগ, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বলপূর্বক গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন হিদি হাওতলা। যিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্যাপক প্রভাবশালী। সেইসঙ্গে উক্ত বিষয়ে পার্লামেন্টের এক প্রস্তাবকও তিনি। তার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি সরেজমিনে বাংলাদেশ সফরের পর বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র এবং নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন প্রস্তাবনা ইউরোপীয় পার্লামেন্টে জোরদার হচ্ছে এবং গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে, ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে অধিকারের মামলা’ শীর্ষক প্রস্তাবের ওপর স্ত্রাসবুর্গের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে ভোটাভুটি হওয়ার কথা। প্রস্তাবে বলা হয়েছে- বিচারবহির্ভূত হত্যা, বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করাসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে।
ইইউপিরর ওই প্রস্তাবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অবিলম্বে নি:শর্তভাবে প্রত্যাহার এবং সংগঠনটির নিবন্ধন পুনরায় চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো যেন অনুমোদিত বিদেশি অনুদান কাজে লাগাতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বলপূর্বক অন্তর্ধানের অভিযোগ তদন্তে একটি বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করা হয়েছে প্রস্তাবে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আদালতের শুনানিতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার জন্য আবারও আহ্বানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্য রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইইউপির সদস্যরা তাদের প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরতে ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস, ইইউ প্রতিনিধি ও বাংলাদেশে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দূতাবাসকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
ইইউ পার্লামেন্ট বিষয়ে কাজের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ডক্টর শাকিরুল ইসলাম খান শাকিল জানান, ইইউ পার্লামেন্টের প্রতিটা গ্রুপ ইতিমধ্যে আলাদা আলাদা খসড়া প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও আসন্ন নির্বাচন সংক্রান্ত প্রস্তাব পার্লামেন্টে জমা দিয়েছে। সকল রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন আর চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকারের লঙ্ঘন, আইনের শাসন, হত্যা, গুম, খুন, লুট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে নাগরিকদের অপহরণ, খুন, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড এই সব বিষয় নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টে বুধবার বিতর্ক হয়েছে এবং আজ বাংলাদেশ নিয়ে পার্লামেন্টের সদস্যদের ভোটে মানবাধিকার রক্ষা, গণতন্ত্র ও বিশেষ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাশ হবে।
মন্তব্য করুন