বৃহস্পতিবার রাতে কয়েক ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো। এতে যানবাহন চলাচলে দেখা দেয় সমস্যা, দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। দুই সিটি করপোরেশনের কুইক রেসপন্স টিম জলাবদ্ধতা নিরসনে চেষ্টা করে গেলেও আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বেশকিছু এলাকায় কোমর সমান পানি দেখা গেছে। এতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভোগান্তি সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর এখনো কাটেনি নগরবাসীর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নিউমার্কেট, ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, গ্রীন রোড ঘুরে দেখা যায়, রাতের বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি এখনো নামেনি। কোথাও রয়েছে হাঁটু পানি, কোথাও আবার কোমর সমান পানি রয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় দেখা যায়- কুইক রেসপন্স টিম জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে। যদিও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এ নিয়ে তৎপরতা ছিল কম।
দুপুরে ঢাকা কলেজ ঘুরে দেখা যায়, কলেজের হলের সামনে মাঝে মাঝে যেন স্রোত বইছে। পুকুর প্লাবিত হয়ে একাধিক হলেও পানি প্রবেশ করেছে। এতে শিক্ষার্থীর ডাইনিং বন্ধ রয়েছে। হল বন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো শিক্ষার্থী। ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশের গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স, বদরুদ্দোজা মার্কেটের বিক্রেতাদের দোকান থেকে পানি বের করতে দেখা গেছে। তাদের অনেক কাপড় ভিজে গেছে। বস্তায় থাকা কাপড় বের করে সড়কের পাশে রেখে তা পরিষ্কার করতেও দেখা গেছে অনেককে। নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা যথাযথ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় অসন্তোষ ও ক্ষোভ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ আশপাশের হলগুলোতে প্রবেশ করেছে বৃষ্টির পানি। শিক্ষার্থীরা আটকা পড়েছে হলে। একই অবস্থা দেখা গেছে গ্রীন রোড এলাকায়।
নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটের ভেতর ও সামনের সড়ক পুরোটাই পানির নিচে ডুবে আছে। মিরপুর সড়কেও রয়েছে পানি। ঝিগাতলা থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত অংশে দুপুর পর্যন্তও পানি নামেনি। এ সময় দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি দোকানেই প্রবেশ করেছে বৃষ্টির পানি। নিচু দোকানগুলো প্রায় অর্ধেক অংশ পানির নিচে। নষ্ট হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল। নীলক্ষেতের সামনের সড়কে পানি জমে থাকার কারণে তেমন কোনো গাড়ি চলাচল করছে না। তবে সাধারণ মানুষ রিকশা ও ভ্যানে করে ওই সড়ক পারাপার হচ্ছেন। রিকশার পাদানি ও ভ্যানের পাটাতন পর্যন্ত ডুবে থাকছে সড়কে জমে থাকা পানিতে।
নিউমার্কেটের দোকানি নজরুল বলেন, রাতে সব মাল উঁচু করে রেখে গেছি। সকালে এসে দেখি পানি আরও বেড়েছে। দোকানের ক্যাশ বাক্সসহ প্রায় অর্ধেক কাপড় পানিতে ভিজে গেছে।
পাশের এক বই দোকানি জানান, অন্তত এক হাজার বই ভিজে গেছে। যেন বন্যা হয়েছে নিউমার্কেটে।
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী সাখাওয়াত আল হোসাইন বলেন, সবকিছু পানিতে একাকার। ডাইনিং বন্ধ। হলে পানি উঠেছে। বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। পুরো ক্যাম্পাস যেন পানি আর পানি। এসব পানিতে ময়লা ভাসছে। ভেসে রুমে, হলে ঢুকে পড়ছে।
পুরান ঢাকার হোসাইনী দালান রোড, নাজিমুদ্দিন রোড, চাঁনখারপুল লেন ও নিমতলী এলাকা ঘুরে জলাবদ্ধতার এমন চিত্রই দেখা গেছে। আগের রাতের বৃষ্টিতে পরদিন দুপুরেও পানিবন্দি পুরান ঢাকার মানুষ। সকালে চাঁনখারপুল লেন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি ভাঙারির দোকানে কয়েকজন কর্মচারী পানি অপসারণ করছেন। পানি ঢুকে দোকানের বিভিন্ন মালামাল ভিজে গেছে।
নাজিমুদ্দিন রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে সড়কের পাশে জমিয়ে রাখা ময়লা-আবর্জনা ও ড্রেনের ময়লা একাকার হয়ে গেছে। রাত থেকে নোংরা পানি মাড়িয়েই চলাচল করছেন মানুষ। রাস্তার দুপাশের অধিকাংশ দোকানে পানি ঢুকেছে।
হোসাইনী দালাল রোডে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পর ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও জলাবদ্ধতা কমেনি। পানি সরছে না প্রধান সড়ক থেকে। সেখানে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাত থেকেই কুইক রেসপন্স টিম জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে। কোথাও পানি জমে থাকলে ১৬১০৬ নাম্বারে নগবাসীকে ফোন করতে বলা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে নগরবাসীর সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন