প্রগতিশীল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সমমনা দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সম্মিলিত সংখ্যালঘু সুরক্ষা পরিষদ গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
তারা বলেছেন, বাংলাদেশের যারা সংখ্যালঘু রয়েছেন আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ বিশ্বব্যাপী একটি ষড়যন্ত্র চলছে। যে কোন মূল্যে এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।
তাই যে সব এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বেশি বসবাস, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠনের বিকল্প নেই। অন্যথায় নির্বাচন ঘিরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।
আজ বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিশিষ্টজনরা এই অভিমত তুলে ধরেন।
‘নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি আমেরিকাকে ডেকে আনছে’ মন্তব্য করে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাফল্য ও উন্নয়নের ধারা স্তব্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার বন্ধ করে দেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ, সন্ত্রাসী, জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে জামায়াত-বিএনপির মতো ’৭১ ও ’৭৫-এর খুনিরা আবার মাঠে নেমেছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা আন্দোলনের নামে তাণ্ডব করছে এবং গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়ে বিদেশী হস্তক্ষেপ ও আগ্রাসনের ক্ষেত্র তৈরি করছে।
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, আপনাদের কাছে আমাদের আবেদন যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে, যারা গণতন্ত্রের নামে গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, তাদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে পারেননি। আগামী নির্বাচনে যাতে দেশের সকল নাগরিক শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আগেই নিশ্চিত করতে হবে।
মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি বলেন, বাংলাদেশের যারা সংখ্যালঘু রয়েছেন আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ বিশ্বব্যাপী একটি ষড়যন্ত্র চলছে। এজন্য সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা জরুরি।
১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, আমাদের উচিত এখনই শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে কাজ আরম্ভ করা। অতীতে আপনারা যে নির্বাচনকালীন সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন সেই সহিংসতার সঠিক তথ্য প্রমাণ নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার এম্বাসিগুলোর সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা যদি পুনরায় নির্বাচিত না হন তাহলে কেবল সংখ্যালঘুরাই নন, গ্রামের পর গ্রাম আওয়ামী লীগারদেরও দেশ ত্যাগ করতে হবে।
শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ বলেন, নির্বাচন আসলেই আমরা আতঙ্কিত হই। কিন্তু তখন আতঙ্কিত না হয়ে সমমনাদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ-এর সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভিকটিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তির জন্য আমরা সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে ছিলাম। যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। এখনও সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং দলিত ও হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের বৈষম্য, পীড়ন ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। এসব সমস্যা নিরসনের জন্য জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন এবং সংখ্যালঘু কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠনের জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে এ দাবি পূরণের ঘোষণার পুনরায় দাবি জানাচ্ছি।
২০০১ সালের নির্বাচন ছিল সংখ্যালঘুদের জন্য যেন এক অভিশাপ এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন-এর সভাপতি মানবাধিকার নেতা নির্মল রোজারিও বলেন, নির্বাচন আসলে দেশের ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি, শঙ্কা কাজ করতে থাকে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ মনে করে যে কোন জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচন মানেই হল নির্যাতন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের এই ধারণা হয়েছে।
দেশে অসাম্প্রদায়িকতার উজ্জ্বল গৌরব ফিরে আসুক-এ আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় বলেন, ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর বর্বর নির্যাতন চালায়। সে সব ভয়ংঙ্কর ঘটনা আজও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের তাড়া করে। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ পল্লীতে নারকীয় হামলা আমরা এখনো ভুলতে পারি না। সব ঘটনার সাথে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি জড়িত। আমরা কেউ চাই না বাংলাদেশে সেই অপশক্তি পুনরায় ক্ষমতায় আসুক।
মন্তব্য করুন