বর্তমান বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলরূপে বিবেচিত বাংলাদেশের অব্যাহত বহুমাত্রিক উন্নয়ন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠলক্ষ্যসমূহ বা এসডিজি অর্জনে পর্যটনক্ষেত্রে সফলতা লাভ করার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ উচ্চমধ্যম আয়ের রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জনের পথে রয়েছে। একইসঙ্গে জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত যে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে হবে ইউএনডব্লিউটিও বলছে তার ৩টি এসডিজি সরাসরিভাবে পর্যটনের সাথে যুক্ত।
প্রকৃতপক্ষে দেশভেদে পর্যটন ১১ থেকে ১৩টি মন্ত্রণালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২৩টি, সাথে রয়েছে আরও প্রায় ৫৫টি বিভাগ।
অনুরূপভাবে দেশভেদ বিবেচনায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৬টি এসডিজি সরাসরিভাবে পর্যটনের সাথে যুক্ত। পরোক্ষভাবে সংযুক্ত আরও ১১টি। সুতরাং আগামিদিনে পর্যটনক্ষেত্রে ব্যর্থতার অর্থ দাড়াবে এসডিজি বা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনে ব্যর্থতা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সমীক্ষা পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে আসন্নসময়কালে ১২ থেকে ১৭টি দেশ পর্যটনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তারমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমান পৃথিবীতে যে কোনো দেশের জন্য পর্যটনকে বিবেচনা করা হয় আগ্রাধিকার খাতরূপে, কারণ পর্যটন একইসাথে ১০৯টি খাত ১১০০ উপখাত এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানেরই সৃষ্টি করেনা এটি সামাজিক-অর্থনৈতিক জীবনে কল্যাণ ও শান্তি বয়ে আনে।
পর্যটনের মাধ্যমে সাফল্যলাভের সম্ভাবনাময় সফল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম হলেও বাংলাদেশ আজও কাক্সিক্ষত পর্যটন সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। সাধারণভাবে যে কোনো কার্যক্রমের জন্য ‘গুড নলেজ’ এবং ‘শার্প ইন্ট্রেলিজেন্স’কে মূল নিয়ামক শক্তি ধরা হয়। কিন্তু পর্যটনের ক্ষেত্রে নলেজ ও ইন্টেলিজেন্সের সাথে যেটি আবশ্যক তা হচ্ছে ‘উইজডম’ বা ‘পর্যটন-প্রজ্ঞা’।
বাংলাদেশে এই পর্যটন প্রজ্ঞার প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে বলে আজ এক অনুষ্ঠানে বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেণ। পর্যটনক্ষেত্রে বহুমুখি থিঙ্কট্যাঙ্করূপে আনুষ্ঠানিকভাবে আতœপ্রকাশ করা গ্লোবাল সাসটেইনেবল টুরিজম নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ-জিএসটিএনবি এর চেয়ারম্যান এং সাবেক সিনিয়র সচিব মো: আব্দুস সামাদসহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন টুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা আবু তাহের মো: জাবের, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো: রাহাত আনোয়ার, নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচাল মফিজুর রহমান, সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা রাজী হাসান, এম্বাসেডর ও সাবেক সচিব মাহবুব-উজ-জামান, পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর ড. মল্লিক ফখরুল ইসলাম, সাবেক সহকারি নৌবাহিনী প্রধান এম মাহবুব-উল-আলম, প্রতিষ্ঠানটির উদদেষ্টা এবং ইস্তাম্বুল মেয়রের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা এম্বাসেডার মুস্তফা উসমান তুরান, ঢাকাস্থ আলিয়স ফ্রসের পরিচালক ফ্রসোয়া গ্রোজে প্রমুখ। ‘টুরিজস, কালচার এন্ড নেটওয়ার্কিং’ শিরোনোমে পর্যটন ভবনে অনুষ্ঠিত GSTNB এই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নির্বাহি পরিচালক আবু সুফিয়ান।
গ্লোবাল সাসটেইনেবল টুরিজম নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ একইসাথে দেশি-বিদেশি, সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহ, একাডেমিকস, প্রফেশনালস, রিসার্চারস, লেখক, সাংবাদিক এবং পর্যটকদের সাথে বহুমাত্রিকভাবে পর্যটনের উন্নয়ন, পরিকল্পনা, প্রচার-প্রসার ও বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাওয়াই মূল লক্ষ্য বলে জানান, যারমধ্যে গবেষণা, নীতি-নির্ধারণ ও সরকারের কৌশল প্রণয়নে সহায়তা করা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, দেশে-বিদেশে ইভেন্ট আয়োজন এবং সর্বোপরি পিপল টু পিপল কন্টাক্ট প্রতিষ্ঠা করা উল্লেখযোগ্য।
মন্তব্য করুন