ঢাকার আনাচে কানাচে রিকশাই যেন সাধারণ মানুষের ভরসার বাহন। এবার সে বাহনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা-ইউনেস্কোর বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ঢাকা শহরের ‘রিকশা ও রিকশাচিত্র’। যার নেপথ্যে কাজ করেছে বাংলা একাডেমি এবং এর সার্বিক প্রণোদনায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বিশেষ এই অর্জনকে স্মরণীয় করে রাখতে বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এক আনন্দ সম্মিলনের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির প্রশাসন মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। রিকশা ও রিকশাচিত্রের বিশ্বস্বীকৃতির নেপথ্যের দীর্ঘযাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, বাংলাদেশ রিকশা আর্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বাংলা একাডেমির ফোকলোর জাদুঘর ও মহাফেজখানা বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. আমিনুর রহমান সুলতান এবং সংস্কৃতি পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. সরকার আমিন।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রিকশা আর্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাংলা একাডেমির স্বপ্নদ্রষ্টা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ইউনেস্কোতে বাংলার লোকসাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি আদায়ে সুদূর অতীতে কাজ শুরু করেছিলেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ র কাজের ধারাবাহিকতায় বাংলা একাডেমির মাঠকর্ম, তত্ত্বীয় গবেষণা এবং সার্বিক উপস্থাপনার ফলে জামদানি শাড়ি, মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং সর্বশেষ ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র ইউনেস্কো কর্তৃক বৈশ্বিক অপরিমেয় সাস্কৃতিক ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তি লাভ করেছে। আমাদের এই কাজে সার্বিক প্রণোদনা দিয়ে চলেছেন বাংলাদেশ সরকারের সদাশয় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই বিশেষ অর্জন আমরা এদেশের রিকশা-পেশা এবং রিকশাচিত্রশিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলকে উৎসর্গ করছি।
ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলা একাডেমি বাঙালি জাতিসত্তার সমস্ত ইতিবাচকতাকে জাতীয় পর্যায় পেরিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরার আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
ড. আমিনুর রহমান সুলতান বলেন, এ অর্জন বাংলা একাডেমির। এ অর্জন বাংলা ও বাঙালির। এ অর্জন এদেশের প্রতিটি রিকশাচালক এবং রিকশাচিত্রশিল্পীর ও বাংলাদেশের। এসময় ড. সরকার আমিন বলেন, আমাদের লোকপ্রজ্ঞার শিল্পীদের বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরতে এই স্বীকৃতি বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, রিকশা ও রিকশাচিত্রশিল্পের ইউনেস্কো-স্বীকৃতির সহযোগিতার জন্য আমরা বাংলা একাডেমির কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, বাংলা একাডেমি রিকশা ও রিকশাচিত্রের বিশ্ব-স্বীকৃতির জন্য যে অসাধারণ অবদান রেখেছে তা অভিনন্দনযোগ্য। সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি ঢাকা শহরে রিকশার জন্য সংরক্ষিত ‘রিকশা লেন’ চালু করা হোক। প্রতিটি রিকশার পেছনে রিকশাচিত্র সংযোজিত থাকাও এখন সময়ের দাবি।
ড. মো. হাসান কবীর বলেন, বাংলা একাডেমির ফোকলোর উপবিভাগ দেশের রিকশাচিত্রশিল্পীদের সহায়তায় দেশের জন্য যে বৈশ্বিক স্বীকৃতি বহন করে এনেছে তা আমাদের জন্য অপরিমেয় আনন্দের উৎস হয়ে থাকবে।
রিকশা ও রিকশাচিত্রের ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি-প্রাপ্তিতে দেশের আপামর রিকশাশিল্পীদের পক্ষে রিকশা আর্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়া।
মন্তব্য করুন