বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশি, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কেনা ফুলের তোড়া ও রিং ভেঙে ফেলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। সেইসঙ্গে বিরোধীদলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে বলেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে অদ্যাবধি বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। সেখানে বিএনপির এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যেতে পারছেন না। এমনই পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়েও নজরদারি করছে পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উপরন্তু বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে পুলিশ গুলশানস্থ কার্যালয়ে তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালিয়েছে। যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক এবং অগণতান্ত্রিক।
নেতৃদ্বয় বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে প্রবেশ বা তল্লাশি করতে গেলে অনুমতি নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে কক্ষে কক্ষে তল্লাশি চালিয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য সেখানে রাখা পুষ্পস্তবকসহ আনুসঙ্গিক সবকিছু নিয়ে যায়। এমনকি কার্যালয়ে কেউ গেলে তাদের গ্রেপ্তারের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এভাবেই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে বাধার সৃষ্টি করেছে সরকারের কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা। তারা যেন একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, এমনিতেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার আন্দোলন চালিয়ে আসা বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের প্রতি সীমাহীন নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে সরকার। সারা দেশে বিএনপির প্রায় অর্ধশতাধিক কার্যালয় বন্ধ করে রেখেছে। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারের নির্যাতন নিপীড়নে মৃত্যুবরণ করেছেন অনেকেই। শুধু তাই নয়, মামলা না থাকলেও শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী এবং আইনজীবীসহ পেশাজীবী নেতাদের বাসা-বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের না পেলে পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমনকি আটক করে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এসবই প্রমাণ করে, আওয়ামী লীগ সরকার ফের একতরফা নির্বাচন করতে মরিয়া। এক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা দিচ্ছে অনুগত পুলিশ বাহিনী। যার প্রমাণ গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশি। এভাবে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোকে ভয় দেখিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চায় আওয়ামী লীগ।
তারা বলেন, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ থাকার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রশাসন সরকারের নির্দেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের এমনকি শিক্ষক, প্রকৌশলী, ডাক্তার ও সাংবাদিকসহ পেশাজীবী নেতাকর্মীদের ও সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী সাধারণ মানুষকে গুম, খুন, মামলা, হামলা গ্রেপ্তার নির্যাতনসহ ভয় ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। নেতৃদ্বয় পুলিশ-প্রশাসনকে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশ না মেনে সংবিধান মোতাবেক অর্পিত দায়িত্ব পালন এবং পেশাদার আচরণ বজায় রাখার আহ্বান জানান। অন্যথায় জনগণ সময়মতো এসব অন্যায় কর্মকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবে বলেও জানান তারা।
মন্তব্য করুন