রাজধানীর বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে লাগা আগুনে নারী-শিশুসহ মারা যাওয়া ৪৪ জনের মধ্যে ৩৯ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাদের মরদেহ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে ভবনটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
বেইলি রোডের আগুন লাগা ভবনটি সাততলা। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট ছিল। তৃতীয় তলায় ছিল একটি পোশাকের দোকান। তাছাড়া ওপরের তলাগুলোতেও ছিল খাবারের দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় জমত। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে খেতে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনটির দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা ওপরের তলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত লোকজন ওপরের দিকে উঠে যায়। এ সময় ভবন থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। তাদের মধ্যে ১২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক
রাত একটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহবাগ থানার এসআই মহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, রাত একটা পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেডিকেলে আসা ১১ জনের লাশ গুনেছেন। নিহতদের ছবি তুলে রাখছেন তিনি। ঘটনাস্থলে আরও কতজন আছে তারা এখনো জানেন না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মুহিত উদ্দিন একই সময়ে গণমাধ্যমকে জানান, ‘বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। এখনো সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।’
রাত সোয়া একটার দিকে পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বেইলি রোডে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘৪২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা তাদের বিষয়ে শঙ্কিত। তাদের চিকিৎসা ও জীবন রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি।’
রাত ১টা ৫৫ মিনিটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানান। এর মধ্যে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ১০ জন মারা যান এবং ৩৩ জন ঢাকা মেডিকেলে মারা যান।
মন্ত্রী আরও জানান, এখনো ২২ জনকে নিয়ে তারা শঙ্কায়। তাদের সবার কণ্ঠনালি পুড়ে গেছে।
রাত আড়াইটার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আইজিপি সাংবাদিকদেরকে জানান, ‘আমি পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে একজনকে মৃত দেখে এসেছি। সব মিলিয়ে ৪৪ জনের মৃত্যুর তথ্য আছে।’
উদ্ধারকাজ
অগ্নিকাণ্ডের পর ভবনের ভেতরে ধোঁয়া ছিল। এরপর ভবনে তল্লাশি চালিয়ে অচেতন অবস্থায় কয়েকজনকে বের করে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
রাত সোয়া একটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ভবন থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া অচেতন অবস্থায় ৪৫ জনকে উদ্ধার করা হয়। যাদের অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, তাদের মধ্যে ২১ জন নারী ও ৪ শিশু রয়েছে। এর বাইরে ১৫ জন নারীসহ ৭৫ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, ভবনটির তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছাড়া অন্য সব তলায় রেস্তোরাঁ ছিল। এসব রেস্তোরাঁয় অনেক গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তিনি জানান, এ ঘটনায় যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন। তাদের শরীরে পোড়ার ক্ষত তেমনটা দেখা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী সাংবাদিকদের বলেন, ভবনের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সিঁড়িতে বড় বড় গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। সেগুলোতে আগুন ধরে যাওয়ায় লোকজন বের হতে পারেননি।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া জানিয়েছেন, বহুতল ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত।
তদন্ত কমিটি
এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।
আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। সেখানে আইজিপি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের একজন সহকর্মীর কন্যা মারা গেছেন। পুলিশ হাসপাতালে আরও একজন মারা গেছেন। দোয়া করবেন যে ৭৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের জীবন যেন রক্ষা পায়।’
ঢাকা মেডিকেলে মর্মান্তিক দৃশ্য
আগুনে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত একটার পর সেখানে এক মর্মান্তিক দৃশ্য দেখা যায়। একের পর এক অ্যাম্বুলেন্সে হতাহত ব্যক্তিদের সেখানে আনা হয়। তখন স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
আগুন লাগার পর ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে অন্তত ১২ জনকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন