নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে আমাদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই, আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়।
শনিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে পেশাজীবীদের সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। একদফা শুধু বিএনপি বা দলের ব্যক্তির ডাক নয়। এটা সমগ্র জাতির ঘোষণা। ভিসানীতি বা কী আসছে এগুলো দেখার বিষয় নয়। এটা যাদের দেখার বিষয়, তারাই দেখবে। আমরা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সমাধান করব। আমাদের লক্ষ্য টেক ব্যাক বাংলাদেশ।
ফখরুল বলেন, আমরা আজকে চরম সংকট ও ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের তরুণ প্রজন্মের নেতা দেশনায়ক তারেক রহমান।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে একদফা দাবিতে সব পেশাজীবী নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবাইকে আবারও জোটবদ্ধ হয়ে সমগ্র মানুষকে জাগ্রত করে এই সরকারের পদত্যাগ ঘটাতে হবে।
পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেকোনো পরিবর্তন কখনোই সম্পূর্ণ হয় না যতক্ষণ পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরা এগিয়ে আসেন। বিশ্বের বহু দেশে পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরা গণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও তাদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম ও সর্বাগ্রে।
তিনি বলেন, আমরা এখন অস্তিত্বের ক্রান্তিকাল পার করছি। আমরা জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে পারব কি না, ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য ভবিষ্যৎ নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব কি না। এগুলো আজকে খুবই জরুরি। আজকে ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। তার দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ও রাষ্ট্রীয় সম্ভাবনাকে ধংস করে ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি অসহায় বোধ করি বিচারব্যবস্থার কাছে। আজকে শুধু জুডিশিয়াল ক্রাইমের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে। হাইকোর্ট যে রায় দেয় লয়ার কোর্ট সেটি বাতিল করে দেয়। আমরা যাব কোথায়? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাতুল কোবরার জামিন বাতিল করেছে। তার কী অপরাধ? শুধু ইউটিউবে একটি অনুষ্ঠানে এ্যাংকরিং করেছে মাত্র। আজকে বিএনপি করলে কারও চাকরি হয় না। প্রমোশন হয় না। ব্যবসা করলেও বলা হয় বিএনপি করে। ফলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ নেই। খালি তিনগুণ ট্যাক্স দাও।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা হয়। আদালতে গেলে অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আজকে সাংবাদিকরা ঠিকমতো লিখতে পারেন না। নিউজের ট্রিটমেন্ট দিতে হয় বিশেষ জায়গার নির্দেশে। টিভিতে লাইভ দেখানো হয়নি। আর শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন দেবেন। আসলে প্রতারণা করে মানুষকে কীভাবে বোকা বানানো যায়, সেটা তারা ভালো পারেন।
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, সুতরাং আজকে আমাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। বেরিয়ে আসতে হবে। এই সরকার টিভিতে তাদের উন্নয়ন প্রচার করছে। আর সাধারণ গরিব মানুষের ঘরে ছাদ নেই। এ যেন গায়ে কোর্ট আর পায়ে স্যান্ডেল নেই। জনগণের সঙ্গে তারা উন্নয়ন নিয়ে বিভ্রান্ত করছে।
অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই সরকার দেশে দুঃশাসন দুর্নীতির মাধ্যমে গণতন্ত্রের পতন করেছে। আজকে দেশে মানবাধিকার নেই। এরা তো মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এ জন্যই কি ৭১ সালে আমরা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম? সুতরাং আবারও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে একদফা দাবির ভিত্তিতে সর্বাত্মকভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তা ছাড়া আগামীতে সংলাপ হতে হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং তারেক রহমানকে কীভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা যায় এসব বিষয়ে। ফ্যাসিবাদী শাসকদের বলব- ইতিহাসের দিকে তাকান তাদের পতন কীভাবে হয়েছে! বাংলাদেশেও কিন্তু গণজাগরণের মধ্যেই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটবে।
সমাবেশ শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে একটি নীরব পদযাত্রা বের হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন পেশার নেতারা অংশগ্রহণ করেন।
প্রশাসনে নগ্ন দলীয়করণ, দলীয় বিবেচনায় চাকরি ও পদোন্নতি, ভিন্নমতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও কৃষিবিদসহ পেশাজীবীদের চাকরিচ্যুত ও নিষ্পেষণ, জেল-জুলুম, হত্যা-গুম বন্ধ; সীমাহীন দুর্নীতিতে জর্জরিত, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে পেশাজীবী সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও বিএসপিপির সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরীর পরিচালনায় পেশাজীবী সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএসপিপির আহ্বায়ক ডা. জাহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক ড. তাজমেরী এসএ ইসলাম, ডা. আবদুল কুদ্দুস, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন, অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. মো. আবদুস সালাম, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, কবি আবদুল হাই শিকদার, সাংবাদিক এম এ আজিজ, ডা. একেএম আজিজুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, প্রকৌশলী মো. হানিফ, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু প্রমুখ।
সমাবেশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ডা. শফিকুল হায়দার পারভেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, ড. আল মোজাদ্দেদী আলফে ছানী, কৃষিবিদ গোলাম হাফিজ কেনেডি, শামীমুর রহমান শামীম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক নজরুল ইসলামসহ হাজারো পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন