কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৭ পিএম
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরকরণে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি’

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের লোগো। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের লোগো। ছবি : সংগৃহীত

হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরীত করার নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে। এ কাজে সফল হতে একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মীদের জন্য রীতিমতো পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে সনাতন সম্প্রদায়ের নারীদের ধর্মান্তরিত করার সব কায়দা কৌশলও এসব স্ট্যাটাসে তুলে ধরা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসব অন্যায় কর্মকাণ্ড চললেও কেন প্রতিকার মিলছে না।

একের পর এক সাম্প্রদায়িক এমন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। রোববার (৭ এপ্রিল) পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে এসব ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদিস নামীয় এক তথাকথিত সংগঠনের সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত বেশ কিছুদিন ধরে এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে চলেছে। যাতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্মান্তরকরণে তাদের দলের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব শিবিরদের জন্য নতুন পুরস্কার ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ব্রাহ্মণ মেয়েদের ধর্মান্তরকরণের জন্য তিন লাখ, ভারতীয় বাঙালি মেয়েদের জন্য দুই লাখ, নমশুদ্র মেয়েদের জন্য পঞ্চাশ হাজার আর পুরো পরিবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে কথিত ধর্মান্তরকারীদের।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রচারিত আরেক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, মুসলিম ভায়েরা মূর্তি পূজারীদের (হিন্দুদের) প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত করছে আর সে সঙ্গে সাচ্চা মুসলিম জন্ম দিচ্ছে। সবচেয়ে এটাই ভালো লাগছে, আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা এমনভাবে ব্রেনওয়াশ করছে, সে মেয়েরা ভাবছে- তাদের সত্যি ভালোবাসছে। তাদের এ ভাবনা আমাদের মিশন পরিপূর্ণ করে দিচ্ছে।

এ প্রচারপত্র মনোযোগ সহকারে পড়ার কথাও ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লিখিত রয়েছে। আরেকটিতে লাভ জিহাদের এ কথিত মিশনের গ্রুপ লিডার হিসেবে জনৈক মামুনের নাম রয়েছে।

আরেকটি ফেসবুক গ্রুপের স্ট্যাটাসে কীভাবে হিন্দু নারীকে কথিত প্রেমের ফাঁদে ফেলা হবে তার একটি নির্দেশনাও রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘একটা দুইটা করে ফেক আইডি করবেন হিন্দু নাম দিয়ে। বিভিন্ন হিন্দু ফেসবুক গ্রুপে অ্যাড (যুক্ত) হবেন। অ্যাড হওয়ার পর প্রথম কাজ হচ্ছে সেখান থেকে বেশিরভাগ মেয়েদের ছবিযুক্ত আইডি টার্গেট করবেন এবং হিন্দু মেয়েদের আইডি লিংক আমাদের গ্রুপে প্রেরণ করবেন এবং নিজেরা ফেসবুকে মেসেজ করবেন। আপনারা শুরুতেই মেয়েদের সঙ্গে সমস্ত প্রেমের আলাপ করবেন না। ধীরে ধীরে তাদের মনে প্রবেশ করতে হবে। আগে তাদের মন জয় করতে হবে। বেশি অতিরিক্ত প্রশংসা করতে যাবেন না। তবে মাঝে মধ্যে কথা শেষে হালকা-পাতলা প্রশংসা করবেন এবং প্রতিনিয়ত তার প্রতি যত্নবান দেখাবেন। তার প্রত্যেকটি বিপদে আপনি বেশি উদ্বিগ্ন দেখাবেন এবং কথা শেষে আল্লাহ ভরসা এবং ইনশাআল্লাহ-এ কথাগুলো উচ্চারণ করবেন। তবে তাদের দেব-দেবী নিয়ে প্রথমে কোনো আপত্তি করবেন না, কাউকে খারাপ বলবেন না। তাহলে আপনার প্রতি বিরক্তি চলে আসবে তার মনে। আপনার স্কুলে-কলেজে অনেক হিন্দু বন্ধু আছে। তাদের বিভিন্ন পূজায় আপনার যান। তখন এ অনুষ্ঠানগুলোর মধ্য দিয়ে তাদের কুসংস্কৃতি সম্পর্কে আপনারা জেনে নেবেন। এভাবে করতে করতে একবার প্রেমে পড়লেই বিভিন্ন বাহানা করে এখানে সেখানে দেখা করার বাহানা করবেন। তবে প্রথম প্রথম তেমন কিছু করবেন না যাতে মেয়েটি বিরক্তবোধ করে। তাকে আপনি এমন মনোভাব দেখাবেন, তাকে আপনি অনেক ভালোবাসেন। ওনার শরীর আপনার প্রয়োজন নেই। ওনার মনকে আপনি ভালোবাসেন। তাহলে দেখবেন অতি সহজে এবং তাড়াতাড়ি আপনার প্রতি বেশি দুর্বল হবে। আর দুর্বল হওয়ার পর আস্তে আস্তে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হবেন। আর একবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে আর কোনো টেনশন নেই।’

বিবৃতিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে উদ্ভট সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রসূত উসকানিমূলক প্রচারণা, কথিত ধর্মান্তরকরণ মিশন অব্যাহতভাবে চলতে থাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বিশেষ করে হিন্দু পরিবারগুলো গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ইতোমধ্যে নিপতিত হয়েছে এবং তাদের মেয়েদের জীবনের, শিক্ষার ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তায় অধিকতর শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার ইতোমধ্যে তাদের কন্যা সন্তানদের স্কুলে-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। এসব প্রচারণা ও উদ্ভট কার্যকলাপ সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতির পথে নিরতিশয় বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। এই কার্যকলাপ বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে এসব ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের এবং যারা এহেন উসকানিমূলক অপতৎপরতায় লিপ্ত তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিতে সরকার ও প্রশাসনের কাছে বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৬ দফা দাবি আদায়ে ঢাকায় জুলাই ঐক্যের প্রতীকী কফিন ও মশাল মিছিল

দেশ সেরা ১০ ব্যাংক ও ২ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

গোপালগঞ্জের ঘটনায় ফেসবুকে ‘উপহাস’, এএসপি প্রত্যাহার

‘গোপালগঞ্জ থেকে এপিসিতে ওঠানোর দায় আমিসহ কয়েকজনের’

আইডিয়াল স্কুলে গোপালগঞ্জের শিক্ষক বরখাস্ত

রিউমর স্ক্যানার / পুরোনো ভিডিওকে গোপালগঞ্জের বলে প্রচার করলেন জয়

এনসিপির সমাবেশে হামলার নিন্দা / দুষ্কৃতিকারীরা দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করতে চায় : সমমনা জোট

গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলায় হেফাজতের বিবৃতি

একযোগে গণঅধিকার পরিষদের ১২ নেতার পদত্যাগ

‘একাত্তরের পরাজিত শক্তির ওপর ভর করে ভুল পথে হাঁটছেন’

১০

ফ্যাসিবাদ রুখতে সরকারকে কঠোর হতে হবে: ইউট্যাব

১১

সাতক্ষীরায় ‘জুলাই শহীদ দিবস’ কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ পাননি সংগঠকরা

১২

মাছের প্রজেক্টে দফায় দফায় হামলা, ৫ কোটি টাকা ক্ষতি দাবি

১৩

এখনই ঘরে ফেরা হচ্ছে না বার্সার

১৪

সারা দেশে জামায়াতের কর্মসূচি ঘোষণা

১৫

জুলাই শহীদ দিবসে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বিশেষ প্রার্থনা সভা

১৬

রাজবাড়ীতে একই দিনে দুই দলের কর্মসূচি, অস্থিরতার শঙ্কা

১৭

একটি গোষ্ঠী ধারাবাহিকভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে : টিটু

১৮

রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী কোন খাবার খাবেন, দেখে নিন

১৯

সিরিজ জয়ের পর যা বললেন লিটন

২০
X