দেশের বিভিন্ন স্থানে গত দু’দিন বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হওয়ায় বিরাজমান তাপপ্রবাহ কমে এসেছে। জনজীবনে ফিরেছে স্বস্তি।
কিন্তু এই স্বস্তির মধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আইলা এবং আম্ফানের মতো ক্ষতি হতে পারে রেমাল।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী ২৫ মের পর যে কোনো সময় উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড়টি।
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর নামকরণ করেছে ওমান। আরবিতে যার অর্থ বালি। অবশ্য এই নামে ফিলিস্তিনের গাজা থেকে ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দূরে একটি শহরও রয়েছে।
এবার ধেয়ে আসতে পারে সেই ‘রেমাল’। তবে কতটা ভয়াবহ হবে সেই ঝড়, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিভিন্ন আবহাওয়া মডেল বিশ্লেষণ করে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, প্রায় সব মডেলই দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা নির্দেশ করছে।
যা আগামী ২১ মে থেকে ২৩ মের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে। এরপর ২৪ মে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অর্জন করতে পারে।
তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল যদি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্যের মধ্যবর্তী উপকূলে আঘাত করে, তবে স্থলভাগে আঘাতের সম্ভব্য সময় হবে ২৫ মে সন্ধ্যার পর থেকে ২৬ মে সন্ধ্যার মধ্যে।
আর যদি বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করে, তবে সম্ভাব্য সময় হবে ২৬ মে দুপুর ১২টার পর থেকে ২৭ মে সন্ধ্যার মধ্যে।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল কতটা ভয়াবহ হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এর জন্য আমাদের আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘূর্ণিঝড় রেমালের আগে কি কি সর্তকতা নেওয়া উচিত।
এক. ঘূর্ণিঝড়ের সময় কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে যাবে বা কোথায় গবাদি পশু থাকবে তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে।
দুই. ঘূর্ণিঝড়প্রবন অঞ্চলে যথাসম্ভব উঁচু স্থানে এবং শক্ত করে ঘর তৈরি করুন। পাকা ভিত্তির ওপর লোহার বা কাঠের পিলার এবং ফ্রেম দিয়ে তার ওপর ছাউনি দিন।
তিন.আগেভাগে জরুরি নথিপত্র এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখুন।
চার. দুর্যোগের সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যেমন খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত করে রাখুন।
পাচঁ. দুর্যোগের সময় বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ও পাওয়ার ব্যাংকগুলোকে চার্জ দিয়ে রাখুন।
ছয়. দুর্যোগের সময় অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সংবাদপত্র, টিভি, রেডিওতে আবহাওয়াসংক্রান্ত খবরের দিকে নজর রাখুন।
সাত. ঘূর্ণিঝড়ের সময় কাঁচা বাড়ি কিংবা কোনো ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ভেতরে থাকবেন না, নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন। প্রয়োজনে আশ্রয়স্থলে আশ্রয় নিন।
আট. দুর্যোগের আগে আগেভাগে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে হবে।
নয়. দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার ঘরবাড়ির অবস্থা পরীক্ষা করুন। কীভাবে সেগুলো আরও মজবুত করা যায় তার ব্যবস্থা করুন।
দশ. ঘূর্ণিঝড়ের আগে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় অবশ্যই আগুন নিভিয়ে যাবেন।
এগারো. আশ্রয় নেওয়ার জন্য নির্ধারিত বাড়ির আশপাশে গাছের ডালপালা আসন্ন ঝড়ের আগেই কেটে রাখুন, যাতে ঝড়ে গাছগুলো ভেঙে বা উপড়ে না যায়।
বারো. রেডিও- টেলিভিশন প্রতি ১৫ মিনিট পর পর ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনতে থাকুন।
তেরো. দুর্যোগের আগে টিউবওয়েলের মাথা খুলে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং টিউবওয়েলের খোলা মুখ পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে আটকে রাখতে হবে। যাতে করে ময়লা বা লবণাক্ত পানি টিউবওয়েলের মধ্যে প্রবেশ না করতে পারে।
মন্তব্য করুন