দেশের শিশুদের মেধা বিকাশের সুযোগ দিলে বাংলাদেশকে কেউ আর পেছনের দিকে নিয়ে যেতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার তার কার্যালয়ে অস্বচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি, টিউশন ফি ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ভাষণে এসব কথা বলেন।
মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) এবং এর সমমানের প্রতিষ্ঠানের অস্বচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ উদ্বোধনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩ (বঙ্গবন্ধু ক্রিয়েটিভ ট্যালেন্ট সার্চ-২০২৩)-এর সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বৃত্তি পুরস্কার-২০২২ প্রদানের জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা যদি ছেলেমেয়েদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেই, তাহলে কেউ এ দেশকে পেছনে ঠেলে দিতে পারবে না।’ সরকার গবেষণা ও উদ্ভাবন বাড়াতে উপবৃত্তি দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিশুরা খুবই মেধাবী এবং তাদের মেধা বিকাশে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে যা আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল প্রতিভা অন্বেষণ মেধা বিকাশে একটি মহৎ উদ্যোগ, যেখান থেকে অনেক মেধাবী শিশু বের হয়ে আসছে। আজ আমাদের শিশুরা তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পেয়েছে এবং এখন তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা প্রকাশ পাচ্ছে।
‘কেউ দেশকে পেছনে ঠেলে দিতে পারবে না, অন্ধকারে ফেলে দিতে পারবে না।’
কারও কাছে মাথানত না করে বিশ্ব মঞ্চে আত্মমর্যাদার সঙ্গে আবারও মাথা উঁচু করে দেশকে এগিয়ে নিতে সঠিকভাবে নিজেকে গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। এই বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি এগিয়ে যাবে, আত্মমর্যাদা ও আত্মসম্মান নিয়ে বিশ্ব অঙ্গনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আমরা কারও কাছে মাথা নত করব না। এটি আমাদের অঙ্গীকার।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব সময় এ কথা মনে রাখতে হবে, এ জাতি বীরের জাতি। তারা কারও কাছে মাথা নত করে না। ‘আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা পথ দেখিয়েছি। আমাদের মেধাবী শিশুরা এই পথেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে এই দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এই দেশে থাকবে স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সমাজ।’
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করেছে। সরকার সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণা এবং ব্লু ইকোনমিকে গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ এটি ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সত্যিই আশাবাদী এই দেশকে আর কেউ পিছিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্মৃতি কর্মকার তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৩ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী উপবৃত্তি ও টিউশন ফি হিসেবে মোট ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ১৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে, যারা বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩-এর মাধ্যমে পুরস্কৃত হয়েছেন এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ২২ জন শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বৃত্তি পুরস্কার-২০২২-এ ভূষিত করা হয়েছে। ১৫ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকে একটি ক্রেস্ট, সনদ এবং ২ লাখ টাকা এবং বৃত্তি পুরস্কার-২০২২-এর জন্য নির্বাচিত ২২ শিক্ষার্থীর প্রত্যেকে একটি ক্রেস্ট, সনদ এবং ৩ লাখ টাকা পেয়েছে।’
হাজারীবাগ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রেশমি কানিজ, রাজশাহীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসদিক আহমেদ তন্ময়, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের ছাত্রী কুইন, ন্যাশনাল কার্ডিওভাসকুলার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালের ডা. রাকিবুল আমিন বিজয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবা আহমেদ পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন