বাংলাদেশে চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। একইভাবে ভারত থেকে চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন অবৈধপথে চলে আসছে বাংলাদেশে। উভয় দেশে মোবাইল ফোন পাচার হওয়া বিষয়টি বেশ আগে থেকে জানাজানি হয়েছিল।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে কৃষ্ণনগর স্টেশনসংলগ্ন রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তুফান বিশ্বাস নামে এক যুবক। পথে চুরি হয়ে যায় তার মোবাইল ফোন। চুরি হওয়া ওই মোবাইল ফোনের বিষয়ে তিনি অভিযোগ করেন পুলিশের কাছে। ঘটনার দেড় মাস পর জানা যায়, মোবাইল ফোনটির ‘লোকেশন’ বাংলাদেশের মেহেরপুরে! যা উদ্ধার করা ভারতীয় পুলিশের পক্ষে অসম্ভব।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একইরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর শেখ। তার মোবাইল হারানোর পর পুলিশে অভিযোগ করেন তিনি। কিছুদিন পর জানতে পারেন তার মোবাইলের বর্তমান ‘লোকেশন’ নদিয়া জেলার চাপড়া থানা এলাকায়।
বিষয়টি নিয়ে দিল্লির হাইকমিশন এবং ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস পর্যন্ত যান জাহাঙ্গীর। এমন বেশ কয়েকটি অভিযোগের পর ভারতের পুলিশ, বিএসএফ, বাংলাদেশের ডিবি, বিজিবি তদন্তে নেমে দুই দেশেরই কয়েকজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি পুলিশ জানতে পেরেছে, বাংলাদেশ থেকে চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে চুরি করা মোবাইল ফোন বিনিময় করে এসব চক্র। সীমান্ত লেনদেনের ঝামেলা এড়াতে টাকার পরিবর্তে মোবাইল ফোন বিনিময় হয়। এর মাধ্যমে প্রচুর লাভ করে উভয় দেশের পাচারকারীরা। আর অল্প সময়ে বেশি লাভের জন্য পাচারকারীদের ‘পছন্দের তালিকায়’ রয়েছে এই মোবাইল ‘বিনিময়’ প্রথা। আর এতে ঝুঁকিও কম।
বিএসএফের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর ধরে লোকেশন ‘ট্র্যাক’ করলে যে কোনও মুহূর্তে তার অবস্থান জানা সম্ভব। কিন্তু সীমান্ত পেরিয়ে গেলে উভয় দেশের পুলিশের পক্ষে আর তেমন কিছু করার থাকে না। আবার এসব ফোন তুলনামূলক কম দামে কিনতে পারেন স্থানীয় ক্রেতারা। ফলে চোরাই মোবাইলের চাহিদা বেশি। ঠিক এ কারণেই উভয় দেশের চুরি হওয়া মোবাইল ফোনের বাজার রমরমা হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিবি (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অরগানাইজ ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন) টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন, ‘মোবাইল পাচার একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। আমরা ভারতের ৯ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের কাছে পাচার করে আনা ১০০টির বেশি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে। আবার এই পাচারকারীদের দেওয়া তথ্যে মোহাম্মদ রসুল শেখ নামে এক বাংলাদেশিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি এ কে আর্য বলেছেন, এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে বিএসএফ সতর্ক রয়েছে। এ ধরনের পাচার শূন্যে নামিয়ে আনতে বিএসএফ বদ্ধপরিকর।
মন্তব্য করুন