আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৪৬ পিএম
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
আবু সাঈদ আল মাহমুদ ‍স্বপন

বিএনপি ‘ফাইনাল খেলা ফাইনাল খেলা’ বলে আতঙ্কের সূচনা করেছে

আওয়ামী লীগের সমাবেশ। ‍পুরনো ছবি।
আওয়ামী লীগের সমাবেশ। ‍পুরনো ছবি।

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো অনেক দেশের সহ্য হচ্ছে না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি মুসলমান অধ্যুষিত জনপদ বাংলাদেশ, আর সেই জনপদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন নারী। সেই মহীয়সী নারীর নেতৃত্বে যেভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, সেই এগিয়ে চলাকে অনেকেই পছন্দ করছেন না এবং বাংলাদেশের উত্থানকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন।

আপনারা জানেন, পৃথিবীতে এই সময় অনেক অস্থিরতা চলছে। ফিলিস্তিনের মুসলমান জনগণের ওপর নির্মম অত্যাচার চলে আসছে। নৃশংস গণহত্যার মাধ্যমে ফিলিস্তিন জনগণকে ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।

একসময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ যখন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে তখন পৃথিবীতে অর্থনৈতিকভাবে এটি নিচের সারির রাষ্ট্র ছিল। আমাদের সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার। আমাদের মোট জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত। এ অবস্থায় গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে গেছে। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের এক অভাবনীয় উত্থান পৃথিবীর অনেক দেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ রয়েছে। বাংলাদেশের অতি দারিদ্র্যের হার এখন ৮ শতাংশের কাছাকাছি।

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের উত্থানের বিষয়ে যেভাবে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা এবং অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, তাতে বাংলাদেশের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামীতে ২০৩০ সালের বাংলাদেশ ২০তম অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এই উত্থান অনেকের কাছে গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সর্বগ্রাসী ষড়যন্ত্র চলছে। বিশেষ করে কিছু পরাশক্তি বাংলাদেশের এ উন্নয়নকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।

তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশে বসবাসকারী এই আবহাওয়াতেই বড় হওয়া, বেড়ে ওঠা কিছু নব্য রাজাকার যারা বাংলাদেশের এই উত্থানকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। বাংলাদেশ আজকে পাকিস্তানকে অতিক্রম করে বহুদূর এগিয়ে গেছে। এই এগিয়ে চলাটা কোনোভাবেই তাদের কাছে কাম্য নয়। তারা বাংলাদেশের সফলতায় খুশি হন না। বাংলাদেশের ভালো কোনো খবর তাদের হৃদয়ে রেখাপাত করে না। এই অপশক্তি ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে একটি ব্যর্থ, অকার্যকর ও মেরুদণ্ডহীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।

কিন্তু ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর কাছে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে আজ একটি উদাহরণ। স্বল্প সময়ে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি অনুকরণীয় রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।

এই বাংলাদেশকে আবার পেছনে নিয়ে যেতে চায় একটি অপশক্তি এবং তাদের আন্তর্জাতিক মুরুব্বিরা। তারা নানাভাবে বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অযৌক্তিক কিছু দাবি স্থাপন করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে বিনষ্ট করতে চাচ্ছে। তাদের নজর বাংলাদেশের ভূমির উপরে, বাংলাদেশের জলসীমার উপরে। তাদের উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের মুসলমান জনশক্তির ভেতরে যে অমিয় শক্তি আছে সে শক্তিটাকে ধ্বংস করা। এ কারণেই তারা প্রেসক্রিপশন দিয়ে বাংলাদেশের বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে বাংলাদেশবিরোধী চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে। এই চক্রান্ত যেন সফল না হয়, যেন বাংলাদেশকে আবার পেছনের দিকে ফেরাতে না পারে সে কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে নিয়মতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় একটি অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে সঠিক পথে রাখতে চায়। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা আগামীকাল শান্তি সমাবেশ আহ্বান করেছি।

আমরা বাংলাদেশের জনগণকে অনুরোধ করব তাদের উদাত্তভাবে এগিয়ে আসার জন্য। জণগণকে আহ্বান জানাব যেন বাংলাদেশবিরোধী এই অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য তারা দল-মত নির্বিশেষে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সামনের দিনে এগিয়ে আসেন। দেশপ্রেম আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। দেশপ্রেমকে কেন্দ্র করেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আবার এই দেশপ্রেমকে পুঁজি করেই বাংলাদেশের জনগণ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উৎপাদন বৃদ্ধি করে, সেবা বৃদ্ধি করে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সামাজিক নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে।

শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে উন্নয়নের পাশাপাশি মানবকল্যাণ সাধিত হয়েছে। আমরা দাবি করি না- এটি কেবল আওয়ামী লীগের জন্য সম্পাদিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ মনে করে, আওয়ামী লীগের নেত্রী, বিশ্বসেরা প্রধানমন্ত্রী, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক এবং পরিকল্পনাবিদ জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্ব বাংলাদেশকে সঠিক পথ দেখিয়েছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সব উৎপাদনশীল সেবাধর্মী ও সক্রিয় জনগণ দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রতি ইঞ্চি জমিতে উৎপাদন বাড়িয়েছেন, কারখানায় উৎপাদন বাড়িয়েছেন, সেবার মান বাড়িয়েছেন এবং প্রত্যেকটি নাগরিক বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় বিন্দু বিন্দু অবদান রাখছেন।

আমরা এই সুযোগটি বিনষ্ট হতে দিতে চাই না। আমরা চাই জননেত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ বরাবরের মতো দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের বিন্দু বিন্দু অবদানগুলো রাখার সুযোগ পাক। সবার প্রচেষ্টায় আবার বর্তমান বাংলাদেশ সামনের দিকে অমিয় সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাক- এটাই আমাদের উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য নিয়েই জনগণকে সঙ্গে করে আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে।

বেশ কিছুদিন ধরেই এখন পাল্টাপাল্টি একই দিনে সমাবেশ হচ্ছে। এমনটা করার মূল কারণ হচ্ছে- অতীতে আমাদের জ্বালাও পোড়াওয়ের অভিজ্ঞতা। বিএনপি যেভাবে সাধারণ মানুষ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ওপর নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস করেছে সেগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় তারা একটা দেশবিরোধী অপশক্তি। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এখন রাজপথে গণতান্ত্রিক শক্তির সক্রিয় উপস্থিতি শান্তি অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ কারণে আমরা কোনো ধরনের উস্কানি না দিয়ে শুধু শান্তি সমাবেশ করছি। আমরা জনগণকে আশ্বস্ত করে সমগ্র জাতিকে বোঝাতে চাই যে কোনো দুর্যোগ দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে থাকে।

আমরা যদি মাঠ ছেড়ে দিই তাহলে তারা যে মাত্রায় নাশকতা করতে পারে সেই পরিমাণ সক্ষমতা বা জনবল আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কাছে এখনো নেই। এ অবস্থায় বিএনপির সম্ভাব্য নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে সতর্ক এবং সংগঠিত অবস্থান অব্যাহত রাখবে। সরকার বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো বাধা প্রদান করছে না। তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সমাবেশ করবেন, আন্দোলন করবেন, কর্মসূচি পালন করবেন, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন এবং ভাষণ দেবেন। গণতন্ত্রে স্বীকৃত অন্যান্য যেসব কর্মকাণ্ড আছে সেগুলো তারা অবাধে পরিচালনা করছেন। কিন্তু যেখানে কেবল নাশকতা করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, নাশকতার জন্য তারা সংঘটিত হচ্ছেন- সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুব বিনয়ের সঙ্গে এবং খুব শিথিলভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা যেন কোথাও নাশকতা না করতে পারে শুধু এটুকু দেখা হচ্ছে। কোথাও গণগ্রেপ্তার বা মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে না। এদিকে বিএনপি বারবার বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছে। প্রতি সমাবেশের আগে ‘ফাইনাল খেলা ফাইনাল খেলা’ বলে এক ধরনের আতংকের সূচনা করছে।

নিয়মিত তল্লাশি কার্যক্রম চলছে যেটা অন্যান্য সময়ও চলে। অস্ত্র বহন, লাঠি, বোমা বহন নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি চালানো হয়। শুধু বিএনপির সমাবেশের সময় না, যে কোনো সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিয়মিত কাজটা করে বিএনপির সমাবেশকে ভণ্ড করার জন্য কোনো ধরনের হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে পরিচালনা করা হচ্ছে না।

এ ছাড়া বিএনপির নিরাপত্তাবিষয়ক সম্পাদক যিনি একজন বিদেশি ভদ্রলোক, তিনি প্রতিনিয়ত বাজপাখির মতো নজর রাখছেন। তার প্রিয় দল বিএনপির নেতাকর্মীদের যেন কোথাও হয়রানির শিকার হতে না হয়, বিএনপির কর্মীরা নাশকতা করলেও যেন সামান্য পরিমাণ বাধার সম্মুখীন না হন, তা নিয়ে তিনি সদা সচেষ্ট রয়েছেন।

আবু সাঈদ আল মাহমুদ ‍স্বপন: জাতীয় সংসদের হুইপ ও সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরানের সরকার আসলে কীভাবে পরিচালিত হয়?

আরও ২২ জন করোনা শনাক্ত

ঢাকায় ম্যানেজার পদে চাকরি দেবে বিকাশ

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কার্নিভাল অনুষ্ঠিত 

নোয়াখালীতে স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্স অনুষ্ঠিত

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন

অবসর নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি ধোনি

বৃক্ষ সংরক্ষণ-সম্প্রসারণে গবেষণা বৃদ্ধি করা হবে : বনমন্ত্রী

স্নাতক পাসে সেলস ম্যানেজার নেবে এসিআই

আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

১০

মাকে খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গেল সোহান

১১

দেশের বাজারে টাটা যোদ্ধা

১২

রাতেই কোথাও ৮০, কোথাও ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১৩

বাংলাদেশের খেলা দেখেন না মাশরাফী   

১৪

প্রথমবারের মতো জবিতে প্রকাশ হলো ২ খণ্ডের জার্নাল

১৫

অটোরিকশা কোথায় কীভাবে চলবে নির্দেশনার পর ব্যবস্থা : ডিএমপি

১৬

এপেক্সে অফিসার পদে চাকরির সুযোগ

১৭

রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত / ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা নিয়ে জল্পনা

১৮

২০০ বগি কিনতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রেলের চুক্তি স্বাক্ষর 

১৯

ছাত্রলীগ নেতাকে বেধড়ক কোপাল দুর্বৃত্তরা

২০
X