কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম
আপডেট : ২৭ মে ২০২৫, ০৬:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফরিদপুরে বিএনপিতে আ.লীগের পুনর্বাসনের অভিযোগ

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এবং পাচুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে (ডানে, সাদা পাঞ্জাবি) সঙ্গে নিয়ে নিজের অফিসে কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম (মাঝখানে, লাল পাঞ্জাবি)। ছবি : কালবেলা
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এবং পাচুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে (ডানে, সাদা পাঞ্জাবি) সঙ্গে নিয়ে নিজের অফিসে কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম (মাঝখানে, লাল পাঞ্জাবি)। ছবি : কালবেলা

ফরিদপুরে বিএনপির রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের অভিযোগ উঠেছে। আর সেই পুনর্বাসনে স্থানীয় বিএনপির একাংশ কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাকে ঘিরেই গুঞ্জন উঠেছে ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ ঘরানার বহু বিতর্কিত নেতাকর্মী এখন বিএনপির ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছেন, তাও নাসিরের প্রত্যক্ষ তদবিরে।

এদিকে সোমবার (২৬ মে) সকাল ১০টায় আলফাডাঙ্গা চৌরাস্তা এলাকায় একই সময়ে বিএনপির এক পক্ষ মানববন্ধন এবং অপর পক্ষ বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকে। দুপক্ষ ঘটনাস্থলে জড়ো হতে থাকলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সকাল সোয়া ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন আলফাডাঙ্গা বাজার ও চৌরাস্তা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে।

জানা গেছে, বিএনপির নাসির গ্রুপ ও ঝুনু গ্রুপ আলফাডাঙ্গার চৌরাস্তায় সভা আহ্বান করে। নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধানে দুপক্ষের লোক জড়ো হতে শুরু করলে আলফাডাঙ্গা পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়। পরে সংঘাতের আশঙ্কায় আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলফাডাঙ্গা বাজার ও সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন।

সম্প্রতি গত ২৩ মে আলফাডাঙ্গা উপজেলার বেজিডাঙ্গা আমেনা-ওয়াহেদ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে একটি বিএনপির কর্মিসভায় সভাপতিত্ব করেন ২০২২ সালে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ও উপজেলা কৃষকলীগের নেতা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মাসুদ। এ সভাকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এটা বিএনপির সভা না, যারা ১৬ বছর আমাদের দমন, পীড়ন করেছে তারা আজ বিএনপির নাম ব্যবহার করছে—আর নাসির সাহেব সেসব লোককে অতিথি করে পুনর্বাসন করছেন।’

ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষকদলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম। সভার মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন আনোয়ার হোসেন নামে একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি উপজেলা যুবলীগের রানা-সাইফার কমিটির সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম সুজার ভাতিজা।

এদিকে মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাকির মিয়া এবং আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল হাসান টিপু গত ২০২৪ সালের ১৯ অক্টোবর মধুখালীর একটি নৌকা বাইচ অনুষ্ঠানে ফুল দিয়ে খন্দকার নাসিরুলের হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করেন বলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফেসবুকে এমন ছবি ভাইরাল হয়। একই বছরের ৩০ অক্টোবর বোয়ালমারীতে খন্দকার নাসিরের জনসভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাওলা বিশ্বাস মঞ্চে ছিলেন। খন্দকার নাসিরের হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করেন আওয়ামী লীগ নেতা ও মধুখালির মেগচামী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাবির উদ্দিন শেখ এবং সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোনা মিয়া। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী হিরু মুন্সি ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে খন্দকার নাসিরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন।

সর্বশেষ চলতি বছরের রোজার মধ্যে পতিত সরকারের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমানের ডোনার খ্যাত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এবং আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুড়িয়া ইউনিয়নের ২ বারের নৌকা নির্বাচিত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে নিজের অফিসে খন্দকার নাসিরের একটি ছবি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমানও খন্দকার নাসিরের হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দিয়েছে। তিনি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুথানের পর আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তার নামে ফরিদপুরে ফেস্টুন দেখা গেছে। ফেস্টুনে তিনি বাংলাদেশ এলডিপির ফরিদপুর জেলা শাখার সহসভাপতি উল্লেখ আছে।

এমনকি আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেনও কৃষক দলের ব্যানারে নাসিরের পাশে মঞ্চে উপস্থিত থাকেন—যা দলীয় শৃঙ্খলার স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা।

এই খন্দকার নাসিরের সঙ্গে প্রায় সময় দেখা যায় কামরুজ্জামান কদর নামে এক সেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকে, যিনি আলফাডাঙ্গা উপজেলা কমিটির সহসভাপতি। চলতি বছরের ৮ মে জিয়া মঞ্চ নামের একটি সংগঠনে ফরিদপুর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন মিডিয়াতে নিউজ হওয়ার পরে বহিষ্কার হন কদর।

বিএনপির একাংশ বলছে, নাসির এখন আর বিএনপি করেন না—তিনি করেন ‘সুবিধাবাদীদের সমাবেশ’। আর যারা তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে, তাদের ওপর চলছে হামলা, হয়রানি, এমনকি ‘নিজেদেরই’ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের দোসর, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামি প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ সহসভাপতি আরিফুর রহমান দোলনের লোকজনকেও বিএনপিতে জায়গা করে দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে গত ২৩ মে বিকালের জনসভায় মাসুদ মাস্টার আওয়ামী লীগ করেন কি এমন প্রশ্নে খন্দকার নাসির কালবেলাকে বলেন, ‘মাসুদ আওয়ামী লীগ করে কি না আমার জানা নেই, সে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিল, তাকে জোর করে হারানো হয়েছে। তাদের মত জনপ্রিয় লোকদের দরকার। আমাদের ভোটের দরকার আছে। পতিত সরকারের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষক, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও নৌকা মার্কার দুই বারের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিজান আমার আত্মীয় সে ব্যাপক জনপ্রিয়। সে যদি আমাদের দলে আসে, ভোটের মাঠে ভালো করবো।’

রুপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ডিবি হারুনের ক্যাশিয়ার এবং মুজিবুর রহমান চৌধুরীর নিক্সনের ঘনিষ্ঠ মিজানুর রহমান সোনাকে কেন দলে ভিড়িয়েছেন এমন প্রশ্নে খন্দকার নাসির বলেন, ‘সোনার বাবা ছিলেন রুপাপাত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। ডিবি হারুন গাজীপুরের এসপি থাকাকালীন তার সঙ্গে এক্সোভেটর (ভেকু) ব্যবসা ছিল, আর চেয়ারম্যানী করতে গেলে সকলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে হয়, তার মত লোক থাকলে দলের ডেভেলপমেন্ট হবে।’

সবশেষ আলফাডাঙ্গা খনদকার নাসিরে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন হয়। সে প্রসঙ্গে খন্দকার নাসির কালবেলাকে বলেন, ‘আজকের আমার বিরুদ্ধে যারা মানববন্ধন করেছে তারা কেউ বিএনপির না। সব বিএনমের লোক। মানববন্ধনে হামলার বিষয়ে আমি হুকুম দিলে কেউ ফিরে যেতে পারতো না। আমি কিছু বলি নাই তাই তারা পাশের উপজেলার একটি ইটভাটার ভিতরে মানববন্ধন করেছে।’

এ বিষয়ে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম কালবেলাকে বলেন, ‘আমি যেহেতু এই অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তবে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ বিএনপিতে নেই।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জর্ডান সফর নিয়ে বিতর্ক, সিদ্ধান্ত বদলাল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়

ঘরের মাঠে অভিষেকেই গোল করে যা বললেন হামজা

হামজার গোলে সন্তুষ্ট ক্যাবরেরা

ঈদ করছেন কোথায় জামায়াতের শীর্ষ নেতারা?

অমুসলিমদের কুরবানির মাংস দেওয়া যাবে?- জেনে নিন কুরআন ও হাদিস কী বলে

জেনেভা ক্যাম্প থেকে ৪ বস্তা টাকা উদ্ধার

ঘোড়ায় চড়ে ৭ মাসে মক্কায়, তিন স্প্যানিশের হজযাত্রা

মানুষের হাতে নগদ টাকা আবারো বাড়ছে

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির বিবৃতি / ওষুধের কাচামাল আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি শিল্পের জন্য ইতিবাচক

খালেদা জিয়ার বাসায় উপদেষ্টা আদিলুর

১০

বাজেট শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান

১১

বিশ্ব পরিবেশ দিবস / সারাদেশে বৃক্ষরোপণ ও প্লাস্টিক দূষণবিরোধী জনসংযোগ করবে ৬৪ সংগঠন

১২

আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার স্মৃতি পাঠাগারে বই দিলেন ইসলামপুর ইউএনও

১৩

কেজিতে ৭৫ পয়সা ঘুষ নেওয়া সেই খাদ্য কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ

১৪

কারাগারে অপরাধীদের জন্য ভাড়া করা হলো ৪০০ সেল

১৫

অস্ত্রের মুখে গরু ছিনিয়ে নিতে খামার মালিককে মারধর, এরপর যা ঘটল

১৬

ঋণ নিয়ে ঋণ শোধ করার মতো বাজেট : আমিনুল হক 

১৭

দুই বছর পর টেস্ট দলে প্রত্যাবর্তন এবাদতের

১৮

বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ নেই : লায়ন ফারুক

১৯

বন্যা নিয়ন্ত্রণে দুর্যোগ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি ফেনাকোর

২০
X