ড. মো. শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৪, ০২:৫২ পিএম
আপডেট : ১৭ মে ২০২৪, ০৪:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তিনি এসেছিলেন বলে…

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সৌজন্য
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সৌজন্য

আজ বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এক ঐতিহাসিক দিন ছিল ১৭ মে ১৯৮১, কারণ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভাগক্রমে বেঁচে যান। তারা তখন বিদেশ থাকায় ঘাতকরা তাদেরকে হত্যা করতে পারেনি। আজকে সেই কারণে এক সফল নেতার কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অন্য দেশও বাংলাদেশকে অনুকরণ করতে চাচ্ছে। তিনি এসেছিলেন বলে দেশ আজকে এই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক পূর্তি হয়েছে অনেক আগে। আজ আমরা তার নিকট গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি কারণ তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

১৯৮১ সালে এমনি ক্রান্তিলগ্নে ওই বছরের ১৪, ১৫, ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার গুরু দায়িত্ব তার ওপর অর্পণ করা হয়। জাতির পিতার কন্যার হাতে আওয়ামী লীগের মতো বড় সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয় , যা ছিল এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। তখন এবং এখন বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বকে ভয় পায় ঘাতকগোষ্ঠী। সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কিন্তু তাতেও শেখ হাসিনাকে আটকাতে পারেনি। বরং সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসন শেষে জাতির পিতার বাংলাদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ধন্য হয় দেশ এবং গর্বিত হয় জাতির পিতাকে বিশ্বাসী জনগণ। দেশ এক নতুন প্রাণ ফিরে পায় এবং জনগণ নতুন উদ্দীপনায় জাগ্রত হয়।

রাজধানী ঢাকা সেদিন মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা শহর মিছিল আর স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষের মিছিলে মিছিলে ঢাকা এক নতুন ঢাকা হিসেবে আবির্ভূত হয়। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয় জনসমুদ্রে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে সেদিন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের গন্তব্য ছিল ঢাকা। স্বাধীনতার অমর স্লোগান, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, পিতৃ হত্যার বদলা নেব’। ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কৌতূহল আছে সবার। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর কিভাবে তিনি বেঁচে ছিলেন তার ইতিহাস অনেকের কাছেই অজানা। তাই আজকে তার সেই ইতিহাস মানুষ জানার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসকে ঘিরে দর্শক চাহিদা মেটাতে আরও একবার টিভি পর্দায় ফিরে এলো ডকুড্রামা ‘হাসিনা: এ ডটার’স টেল। আমি আওয়ামী লীগসহ সকল পর্যায়ের লোককে এই অনুষ্ঠান দেখার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনা টানা ৪৩ বছর ধরে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন এ দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে। সেই সঙ্গে তার যোগ্য নেতৃত্বে চার-চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে দলটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, শেখ হাসিনাকে এই দীর্ঘ সময় দলের প্রধানের দায়িত্বে থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অনেক কঠিন পথ ও নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে। পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক দুর্গম পথ । কারাবরণ, জীবনের ঝুঁকি, এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া ছাড়াও অনেক চড়াই-উতরাই, ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে এমন এক অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন, যা সত্যিই প্রশংসনীয় । তার সফল নেতৃত্বের কারণেই আওয়ামী লীগ টানা চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছে এবং বর্তমানেও ক্ষমতাসীন হয়ে দেশকে এক উন্নয়নের গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে আজকের অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। অনেক বার তার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়। যদিও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এই হামলায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী শহীদ হন।

এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দল ও সরকারের নেতৃত্বে থেকে বাংলাদেশের জন্য অনেক অর্জনও সম্ভব হয়েছে একমাত্র শেখ হাসিনার জন্য। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ তার নেতৃত্বেই এগিয়ে যাচ্ছে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিকল্পনা তার নেতৃত্বেই এক নতুন রূপ ধারণ করেছে। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তার কর্মসূচিগুলো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, বৈশ্বিক নানা সংকট নিয়ে কথা বলা এবং মতামত দেওয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও শেখ হাসিনা নানা উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। যার মাধমে বিশ্ব দরবারে আমরা নতুনভাবে পরিচিতি অর্জন করেছি।

দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তার হাতে তুলে দেন দেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যের সাফল্যগাথা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পতাকা। সেই সিদ্ধান্তটি ছিল সঠিক এবং যথার্থ, যা আজ বিভিন্নভাবে পরিলক্ষিত এবং প্রমাণিত হয়েছে সর্বক্ষেত্রে। চারবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় যথাযথ প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু হত্যার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও করতে পারছেন এবং চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তার দুই সন্তানকেও সুশিক্ষিত করে তুলেছেন। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আজ তথ্য প্রযুক্তিবিদ। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন এবং দেশের নানাক্ষেত্রে তিনি অবদান রেখে যাচ্ছেন। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। যাদের জন্য আমরাও গর্বিত।

সেদিন বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে, সেখানে লাখো জনতার উপস্থিতিতে এক সমাবেশে শেখ হাসিনা এক কণ্ঠে বলেছিলেন, “সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।

“আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। সত্যি তিনি তার কথার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। দেশের দুঃখ ও গরিব মানুষের পাশে এসে সর্বদা দাঁড়িয়েছেন সেই মানুষটি হল শেখ হাসিনা । যিনি আমাদের গর্ব এবং আমাদের আস্থার ঠিকানা। তার ওপর বিশ্বাস করা যায় ফলে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও আধুনিক উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়তে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করে সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সকলের নিকট বিনীত অনুরোধ করছি। তারই সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সকল নির্দেশ মেনে এবং সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন করে করোনাভাইরাসের সংকট মোকাবিলায় নিজেকে সচেতন করি এবং অন্যকে সচেতন হতে উৎসাহিত করি এটাই হোক আজকের প্রত্যাশা ।

ড. মো. শফিকুল ইসলাম: সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হতে দেওয়া হবে না : সেলিমুজ্জামান

জাপানে বিএনপির রাষ্ট্রবিনির্মাণের ৩১ দফা প্রচারণা

জুবায়েদ হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে ছাত্রদলের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা

এল ক্লাসিকোর আগে কষ্টের জয়ে শীর্ষে রিয়াল

জবি ছাত্রদল নেতা খুন : বংশাল থানা অবরোধ

ঢাবিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নতুন কমিটি 

বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে : মিডিয়া সেল 

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নারীর মর্যাদা সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন হবে : এসএম জাহাঙ্গীর

অ্যানফিল্ডে এক দশকের অভিশাপ ভাঙল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

রূপনগরে আগুন / ডিএনএ শনাক্তের পর ১৬ মরদেহ পেলেন স্বজনেরা

১০

জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী আটক 

১১

সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : বাসস চেয়ারম্যান

১২

রোমাঞ্চকর জয়ে ভারতকে হারিয়ে সেমিতে ইংল্যান্ড

১৩

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

১৪

‘আগুন লাগার ঘটনা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে’

১৫

কিডনি রোগীদের জন্য যে ১০ খাবার নিষেধ

১৬

গাজায় আবারও ইসরায়েলের বিমান হামলা 

১৭

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১৮

আ.লীগের কেন্দ্রীয় ১ নেতা গ্রেপ্তার

১৯

হোটেলে নাশতা খেয়ে শিশুসহ ৬ জন অজ্ঞান

২০
X