

জুলাই সনদকে রাষ্ট্র সংস্কারের দলিল আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানে নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার (০৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর খিলগাঁও দক্ষিণ থানা জামায়াতের উদ্যোগে দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এ টি এম মাছুম বলেন, জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন হবে জুলাই গণআন্দোলনের শহীদ, আহত, পঙ্গু ও অন্ধত্ববরণকারীসহ লাখ লাখ জুলাই যোদ্ধার সঙ্গে প্রতারণা।
বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী কাঠামো বহাল রেখে একটি যেনতেন নির্বাচন দেশের ৫৪ বছরের সমস্যা সমাধানের পথ নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
সরকার পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে উল্লেখ করে এ টি এম মাছুম বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে। তার আগে সরকারকে অবশ্যই সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সমান সুযোগ) নিশ্চিত করতে হবে।
দেশের প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থায় জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতার প্রয়োগ নিশ্চিত হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আনুপাতিক হারে (পিআর পদ্ধতি) নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। জুলাই সনদে পিআর অন্তর্ভুক্ত করে সংসদের উভয় কক্ষে জনগণের রায়ের শতভাগ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। পিআর পদ্ধতি ছাড়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা টেকসই নয়।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রুটি এবং সংবিধানে একক ব্যক্তির সর্বময় ক্ষমতাকে পুঁজি করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার হয়েছে। নির্বাচনকে হাসি-তামাশায় পরিণত করেছে। জনগণের ভোটের, বাকস্বাধীনতার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। গুম-খুন, আয়নাঘর জারি রাখা হয়েছে। সেই ব্যবস্থা আর বহাল রাখা যাবে না। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জনআকাঙ্খাকে ধারণ করে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তিকে আগে নিশ্চিত করতে হবে। তার আলোকে আগামী নির্বাচন হতে হবে। ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোষরদের দ্রুত বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। যারা বারবার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার ও বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে সেই স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গণহত্যার দায়ে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
সুশাসন, জনগণের অধিকার, ইনসাফ কায়েমে আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা মার্কায় জনগণের সমর্থন চেয়ে এ টি এম মাছুম বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে বৈষম্য দূর করবে। ধর্ম-বর্ণ, দল-মত ও নারীর সর্বোচ্চ অধিকারকে সমুন্নত করবে। সাম্য, সামাজিক সুবিচার ও মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবে। দেশের শিক্ষিত, অশিক্ষিত, দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীজীবী মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জামায়াত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিবে। শিক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানো হবে। সব নাগরিকের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় পাওয়ার নিশ্চয়তাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অগ্রাধিকার রাখবে। জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতিকে জাদুঘরে পাঠানো হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে সিন্ডিকেটের মুলোৎপাটন করা হবে। মধ্যস্বত্যভোগীদের দৌরাত্ম নির্মূল করা হবে।
উঠান বৈঠকে প্রধান বক্তা বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা ৯ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী জননেতা কবির আহমদ। তিনি তার নির্বাচনী এলাকার নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে এলাকাকে মাদক ও কিশোর গ্যাং মুক্ত করার পাশাপাশি বেকার তরুণ-যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। সামাজিক অপরাধ, পারিবারিক বিরোধ মেটাতে সামাজিক সচেতনতা, সামাজিক কাউন্সিল ও মোটিভেশনের মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা দূর করার পরিকল্পনার কথা জানান।
কবির আহমদ বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে ইসলাম নির্দেশিত নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। বিশেষত নারীরা যেন তাদের সম্পত্তি সংক্রান্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সেই বিষয়ে সর্বোচ্চ ভূমিকা গ্রহণ করবেন।
খিলগাঁও দক্ষিণ থানা আমির মাওলানা সাজেদুর রহমান শিবলীর সভাপতিত্বে এবং থানা সেক্রেটারি খোরশেদ আলম মজুমদারের পরিচালনায় উঠান বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খিলগাঁও জোনের পরিচালক মাওলানা ফরিদুল ইসলাম।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খিলগাঁও জোনের সহকারী পরিচালক এস এম মাহমুদ হাসান, খিলগাঁও পূর্ব থানা আমির মাওলানা মাহমুদুর রহমান এবং থানা কর্মপরিষদের সদস্য, ওয়ার্ড সভাপতি, সেক্রেটারি।
মন্তব্য করুন