

সারা দেশে ২৩৭ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত জোটের মনোনয়ন নিশ্চিত করেনি বিএনপি। এ নিয়ে জোটের শরিকদের দ্বিধা কাটছে না। তারা এরই মধ্যে বিএনপি মহাসচিবসহ দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক সম্পন্ন করেছে।
তবে বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগির এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা এখন তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছেন।
বিএনপি সূত্র আরও জানায়, এ বৈঠকের পর শরিকরা কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন, বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে এবার আসন বণ্টন নিয়ে ভিন্ন চিন্তা রয়েছে বিএনপির। এ ক্ষেত্রে মিত্রদের আসন বণ্টন সীমিত করে তাদের সংসদের উচ্চকক্ষ কিংবা ক্ষমতায় গেলে অন্যভাবে মূল্যায়ন করা হতে পারে।
গত ৩ নভেম্বর ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিএনপি। বাকি ৬৩ আসন তখন ফাঁকা রাখা হয়। এখানে দলীয় প্রার্থিতার পাশাপাশি জোটের জন্যও আসন রেখেছে বিএনপি। কিন্তু প্রায় এক মাস পার হলেও ফাঁকা আসনগুলোয় কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যেই ফাঁকা আসনগুলোতে কারা সম্ভাব্য প্রার্থী হবেন, তা জানিয়ে দেওয়া হতে পারে।
এদিকে জোটের শরিকরা বিএনপির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তারা প্রত্যাশিত আসনে গণসংযোগ চালিয়ে গেলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বার্তা না পাওয়ায় একধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। এতে পূর্ণ উদ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে পারছেন না জোট শরিকের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
পাশাপাশি প্রতিটি আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারাও সক্রিয় রয়েছেন, তারাও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে এসব আসনে দলীয় না জোট থেকে প্রার্থী করা হবে, তা নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছেন।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম কালবেলাকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে আসন বণ্টন বা আসন সমঝোতার বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে। এটা নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করবেন, বিষয়টি এমন একটা অবস্থার মধ্যে আছে। আমরা ধারণা করি, দ্রুতই মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান কালবেলাকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন করেছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের ইতিবাচক আলোচনা চলছে। এ ছাড়া অন্য দলের পক্ষ থেকেও জোট গঠনের ব্যাপারে গণঅধিকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আশা করি, নির্বাচনের তপশিলের পর এ ব্যাপারে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের নিয়ে একই সঙ্গে নির্বাচন ও সরকার গঠন করার অঙ্গীকার রয়েছে বিএনপির। নির্বাচন সামনে রেখে আসন বণ্টন বা আসন সমঝোতা প্রশ্নে বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী যুগপতের প্রায় সব মিত্রই এরই মধ্যে তাদের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত বিএনপির কাছে ১৬৮ জনের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে যুগপতের শরিকরা।
এর মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ছাড়া ছয় দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চের বাকি পাঁচ দল ৪০ জন, ১২ দলীয় জোট ২১ জন, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯ জন, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ১৯ জন, এলডিপি ১৩ জন, গণঅধিকার পরিষদ ২৫ জন, গণফোরাম ১৬ জন, এনডিএম ১০ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) পাঁচজন, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ছয়জন এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি)) চারজনের প্রার্থী তালিকা দিয়েছে। তবে তালিকা জমা নেওয়ার পর শরিকদের কারও সঙ্গে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বসেনি বিএনপি।
মন্তব্য করুন