ঈদে মানুষ বাড়িতে ফিরেও স্বস্তিতে ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে প্রায় ৩৫ জন মানুষের জীবন হানি ঘটেছে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতির কারণে। তারা বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
রোববার (২ জুলাই) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলীয় কাজে ব্যবহার ও নির্বিকার ভূমিকার জন্যই সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দাপটে গোটা জাতি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আজ দেশকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করার জন্যই শুধু সাধারণ মানুষ নয় পুলিশ সদস্যদেরও জীবন যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা এতটাই ভেঙে পড়েছে, প্রতি পদে পদে মানুষের জীবন বিপন্ন।
তিনি বলেন, বর্তমান সামাজিক অবক্ষয় এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে, ক্ষমতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা দানবদের আক্রমণে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। বিশেষ করে এই সমাজে নারীদের জীবনের যেন কোনো মূল্যই নেই। এমনই এক দুঃসময় চলছে যখন বোনকে উত্যক্ত করার কারণে বিচার চাইতে গিয়ে তরুণ খুন হয়। পিতা-মাতা নিজের মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের কবলে পড়ে জীবন হারায়। প্রতিনিয়ত নিজের কন্যা সন্তানের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে প্রচণ্ড নাজেহালসহ জীবন দিতে হয়।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জেলায় জেলায় গড়ে উঠেছে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় বখাটেদের উৎপাত। কয়েক বছর আগে বরগুনায় নয়ন বন্ডের কথা আমরা জানি, এবারে ভোলায় শুনছি ০০৯ নামে এক ভয়াল গ্যাংয়ের নাম।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান শাসনব্যবস্থায় অবৈধ দখলদাররা কর্তৃত্ব করার কারণে চারদিকে গড-ফাদার, মাফিয়া আর সিন্ডিকেটদের জয়-জয়কার। যদি জনসমর্থিত ও জবাবদিহিমূলক সরকার থাকত তাহলে বর্তমান খাদ্যপণ্যের এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটত না। দলীয় লোকদের দিয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের প্রতি সরকারের উদার দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই আজ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষকে অনাহারে থাকতে হচ্ছে। অস্বাভাবিক দাম দিয়ে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছে না।
রিজভী বলেন, অবৈধ সরকারের মন্ত্রী ও প্রভাবশালী দলের নেতাদের জড়িত থাকার কারণে সিন্ডিকেট প্রচণ্ড শক্তিশালী। যে কারণে ভারতে কাঁচামরিচের কেজি ২৫ টাকা অথচ কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দিলেও সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি থেকে কোথাও কোথাও ১১০০/১২০০ টাকা কেজি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় রয়েছে ধ্বংসের শক্তি। তার কথায় রয়েছে বিদ্বেষের শক্তি। এরা দেশের রাজনীতিতে জীবনীশক্তি ও সহমর্মিতার শক্তিকে নিঃশেষ করে ঠেলে দিয়েছে এক ব্যর্থ ও সীমাহীন অপচয়ের দিকে। ওরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিয়ে তৈরি করছে ক্রমবর্ধমান বিনষ্টির পথ। গণতন্ত্রের স্থায়ী নিরাপত্তা ও ঐতিহাসিক সার্থকতার প্রতি তারা বিদ্বেষপরায়ণ। এজন্য গণতন্ত্রকামী মানুষের কণ্ঠ চাপা দেওয়ার জন্য তারা বিগত ১৪ বছর ধরে লাখ মানুষকে কারাবন্দি ও অসংখ্য মৃতদেহ ইতস্তত বিক্ষিপ্ত, কোথাও স্তূপিকৃত করে গণতন্ত্রের পথকে করেছে জনশূন্য।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন