জামায়াতের সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, অচিরেই জামায়াতের সব নেতাকর্মীকে মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে।
একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবিসহ একটি নৈতিকতাসম্পন্ন ও বাসযোগ্য দেশ তৈরির জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার (১০ জুন) দুপুর ২টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দেশাত্মবোধক গান পরিবেশনের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়।
ডা. তাহের বলেন, সংবিধান পরিবর্তন করে জনগণের দাবি মেনে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান নির্বাচন। সেটা হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। সেটা করতে হলে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করতে হবে। কিন্তু এরা দিনের ভোট রাতে করে। লজ্জা তো ঈমানের অঙ্গ। কিছুটা তো লজ্জা থাকা উচিত নেতাদের।
তিনি বলেন, আজকে দেশের শাসক ও মানুষ সৎ হলে ডোনার দেশ হতাম। কিন্তু সেটা করতে পারিনি। আপনারা না পারলে আমাদের সহযোগিতা করুন। তাহলেই দেশের পরিবর্তন হবে। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি সমাবেশের অনুমতি দেওয়া ও শেষ পর্যন্ত সহায়তার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। জামায়াত কখনো বিশৃঙ্খলা করেনি, করে না এবং করবে না। যদি হয় সেটা কেউ বাইরে থেকে করতে পারে, স্যাবোটেজ। জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস, নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা এবং হামলায় বিশ্বাস করে না। জামায়াত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সুশৃঙ্খল আদর্শিক দল। রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা থাকেন তাদের জামায়াত সম্পর্কে জানতে হবে। আজকে যারা সোনার বাংলা গড়তে ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা ব্যর্থ। সেখানে সোনার বাংলাদেশ ও সোনার নাগরিক তৈরির কাজ করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। যে কারণে কোনো চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ইভটিজিং, মাদক, বা নারী কেলেংকারির ঘটনায় ছাত্রশিবিরের কোনো নেতাকর্মীর নাম আসে না। কারণ জামায়াত ও শিবির মডেল সোনার মানুষ তৈরি করে।
ডা. তাহের দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন। সেইসঙ্গে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তা না হলে জামায়াত মুক্ত করবে এবং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে। একইসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবি এবং একটি নৈতিকতাসম্পন্ন ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ তৈরির জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান ডা. তাহের।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, যারা আমাদের সমাবেশের অনুমতি নিয়ে টালবাহানা করছে তারা জামায়াতের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। বরং তাদেরই ক্ষতি হয়েছে। নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে আমরা মুক্তি দিতে বাধ্য করব ইনশাআল্লাহ। আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েমের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। তাদের কাছে গণতন্ত্র কখনোই নিরাপদ ছিল না। কয়লা ধুলে যেমন ময়লা যায় না। তেমনি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ সাধু হয় না।
সব দল যদি রাজপথে সভা-সমাবেশ করতে পারে জামায়াতে ইসলামীও করবে। চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রেখেছেন কেন? অধিকার আদায় করতে হলে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই করতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল সমাবেশ করব। বিশৃঙ্খলা জামায়াতের ঐতিহ্যে নেই। এ সরকার জনগণকে ভয় পেয়ে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে গেছে। তারা মুখে বলে গণতন্ত্র আর ক্ষমতায় গিয়ে বাকশাল কায়েম করে মুখ চেপে ধরে।
তিনি বলেন, আজকে সরকারের সময় শেষ। কয়েক মাস বাকি আছে। অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ আপনাদের অধীনে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ যত সুন্দর কথা বলুক তাদের বিশ্বাস করা যায় না।
অন্য বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই কোরআন ও ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমাদের ১৪ হাজার নেতাকর্মী জেলহাজতে পাঠিয়েছে। অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে হবে। ব্রিগেডিয়ার আমান আযমী, ব্যারিস্টার আরমানকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সাবেক এমপি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ গ্রেপ্তার সব নেতাকর্মী এবং আলেমদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুর রহমান মুসা, সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আমির আ. জব্বার, ঢাকা মহানগরীর উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন, ড. আবদুল মান্নান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলামসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াত ও শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
সভাপতির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াত সুশৃঙ্খল ও সাংবিধানিক সংগঠন। আমরা সবসময় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী। পরিশেষে তিনি সমাবেশের অনুমতি দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তন ও ইনস্টিটিউশনের চত্বরে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাইরের মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় এবং বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মী রাস্তায় অবস্থান নেন।
দীর্ঘ এক দশক পর রাজধানীতে ইনডোরে (ঘরোয়াভাবে) সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত। নানা নাটকীয়তার পর গত শুক্রবার রাতে কিছু মৌখিক শর্তে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৪ মার্চ রাজধানীর মতিঝিলে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছিল জামায়াত।
মন্তব্য করুন