সৌদি আরবের দাম্মামে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি বাবা, ছেলে ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে স্ত্রী ও বড় মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ওমরাহ পালন শেষে শনিবার (৫ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে আল-কাসিম নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: ১০ বছর পর টাকা ফেরত দিলেন যুবক
এ ঘটনায় নিহত মোবারক হোসেনের ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ চরকমলাপুরের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার বৃদ্ধা মা অসুস্থ আলেয়া বেগম এ খবর জানার পর থেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
নিহতরা হলেন- মোবারক হোসেন (৪৮), তার দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে তানজিল আব্দুল্লাহ (১৭) ও অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে মাহিয়া মাহি (১৪)।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন- মোবারক হোসেনের স্ত্রী শিখা আক্তার (৪০) ও বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানা মীম (১৯)। তারা স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহত সৌদি প্রবাসী মোবারক হোসেন ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার হাজীগঞ্জের গাজিরটেক গ্রামের শেখ মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহন শেখের বড় ছেলে। তার পাঁচ ভাই আর তিন বোনের মধ্যে চার ভাই সৌদি প্রবাসী।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) মোবারক হোসেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ওমরাহ পালনের জন্য পবিত্র মক্কার উদ্দেশে রওনা হন। ওমরাহ পালন শেষে শনিবার তারা দাম্মাম শহরের নিজ বাসায় ফিরছিলেন। পথে আল-কাসিম নামক স্থানে পৌঁছালে পেছন থেকে একটি গাড়ি তাদের গাড়িকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে তাদের গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং গাড়িতে থাকা পাঁচজন গুরুতর আহত হন। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি দুজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে।
মোবারক হোসেন প্রায় দুই যুগ ধরে পরিবার নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে বসবাস করে আসছিলেন। সেখানে তার একটি কার রিপেয়ার শপ (গাড়ি মেরামতের দোকান) রয়েছে। প্রায় ৩০ বছর ধরে সৌদি আরবে বসবাস তাদের। গত চার মাস আগেও পরিবার নিয়ে দেশে বেড়াতে এসেছিলেন তারা।
নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে চরভদ্রাসনের গ্রামের বাড়ি ছেড়ে তারা এখন বসবাস করছেন ফরিদপুর শহরের চর কমলাপুরে।
নিহতের পিতা শেখ মোহম্মদ আলী ওরফে মোহন শেখ বলেন, বড় নাতনি মিমের কানাডা যাওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ করেছিল। তার আগে তারা পরিবার নিয়ে ওমরাহ করতে যায়। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে আর দুই নাতির জীবন শেষ হয়ে গেছে এই দুর্ঘটনায়। আমি আর কী বলব। এ কথা বলে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি।
নিহতের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বুধবার রাতে বড় ভাই মোবারক হোসেন তাদের ফোন করে জানান যে, তারা পরেরদিন ওমরাহ করতে যাবেন। তার ভাইয়ের বড় মেয়ের কানাডা যাওয়ার কথা ছিল আর বাচ্চাদেরও পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা সপরিবারে ওমরায় যাচ্ছেন বলে জানান। এটিই ছিল তাদের সাথে শেষ কথা। তবে তারা মারা গেছেন এ কথা প্রথমেই জানতে পারেননি।
তিনি জানান, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে দেশ থেকে নিহতের শ্যালক সৌদি আরবে গেছেন। এ ছাড়া প্রবাসে থাকা দুই ভাই আহত ও নিহতদের কাছে রয়েছেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, এই রেমিট্যান্স যোদ্ধার মরদেহ যেন সরকার দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
মন্তব্য করুন