কোরবানি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কেবলমাত্র সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য এটি ওয়াজিব। তবে কোরবানির পশু কেনার পর যদি তা চুরি হয়ে যায়, হারিয়ে যায়, কিংবা মৃত্যুবরণ করে- তাহলে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান : এ অবস্থায় কোরবানি আদায় হবে কি না?
এ বিষয়ে ইসলামী শরিয়তের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।
সামর্থ্যবানদের জন্য করণীয়
ইসলামী আলেমগণ বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি সামর্থ্যবান হন এবং কোরবানির জন্য একটি পশু কিনে থাকেন- তা যদি কোরবানির পূর্বে হারিয়ে যায়, চুরি হয়ে যায় বা মারা যায়, তাহলে তার জন্য নতুন আরেকটি পশু কিনে কোরবানি করা ওয়াজিব। কারণ, তার ওপর কোরবানি করা ফরজ ছিল এবং পশুটি হারিয়ে যাওয়াতে দায়িত্ব থেকে সে মুক্ত হয়নি।
দরিদ্রদের জন্য করণীয়
অন্যদিকে, কোনো ব্যক্তি যদি দরিদ্র হন, অর্থাৎ তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়-কিন্তু তিনি সওয়াবের আশায় একটি পশু কিনেছিলেন- সে পশু যদি কোরবানির আগেই হারিয়ে যায় বা মারা যায়, তাহলে তার জন্য নতুন করে পশু কিনে কোরবানি দেওয়া আবশ্যক নয়। কারণ তার ওপর কোরবানি করা ফরজ ছিল না, বরং এটি ছিল নফল ইবাদতের অংশ।
সাহাবিদের আমল
তামিম ইবনে হুয়াইয়িজ (রহ.) বলেন, আমার কোরবানির পশু জবাই করার আগেই হারিয়ে গেল। আমি এ বিষয়ে ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘কোনো অসুবিধা নেই।’ - (সূত্র : বায়হাকি : ৫/২৪৪)
এ থেকে বোঝা যায়, বিশেষ করে নফল কোরবানির ক্ষেত্রে পশু হারিয়ে গেলে নতুন করে কোরবানি করা জরুরি নয়।
ফিকহবিদগণের মতামত
বিখ্যাত হানাফি ফিকহগ্রন্থ ‘বাহরুর রায়েক’-এ বলা হয়েছে, কোরবানির পশু যদি হারিয়ে যায়, তাহলে গরিব ব্যক্তির জন্য নতুন করে পশু কেনা জরুরি নয়। তবে ধনী ব্যক্তি হলে তার জন্য নতুন পশু ক্রয় করে কোরবানি করা ওয়াজিব। (সূত্র : বাহরুর রায়েক : ৯/৩২০)
পূর্বের পশু ফেরত এলে করণীয়
যদি কেউ একটি পশু হারিয়ে ফেলেন এবং পরে আরেকটি কিনে নেন, এরপর হারানো পশুটিও ফেরত পান, তাহলে করণীয়
সামর্থ্যবান হলে : দুটির যে কোনো একটি কোরবানি করলেই যথেষ্ট, তবে দুটিই কোরবানি করা উত্তম।
দরিদ্র হলে : দুটিই কোরবানি করতে হবে, কেননা তার পক্ষ থেকে এগুলো নফল ইবাদতের নিয়তে কেনা হয়েছিল।
সূত্র : বায়হাকি : ৫ / ২৪৪; ইলাউস সুনান : ১৭ / ২৮০; বাদায়েউস সানায়ে : ৪ / ১৯৯; কাজিখান : ৩ / ৩৪৭; আল-বাহরুর রায়েক : ৯ / ৩২০; ফাতহুল কাদির : ৯ / ৫৩০।
মন্তব্য করুন