মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনেক ছোট ছোট বিষয় আছে, যেগুলোকে আমরা তেমন গুরুত্ব দিই না। কিন্তু ইসলাম একজন মুসলমানের প্রতিটি কাজের ভেতরেই শৃঙ্খলা ও আদব শিক্ষা দিয়েছে। খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম থেকে শুরু করে হাঁটা-চলার ভঙ্গি, এমনকি থুথু ফেলা নিয়েও রয়েছে ইসলামের দিকনির্দেশনা। অনেক সময় আমরা অসুস্থতা, গলা পরিষ্কার বা স্বাভাবিক কারণে থুথু ফেলি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, সব দিকেই কি সমানভাবে থুথু ফেলা যায়? বিশেষ করে আমাদের কিবলা যেহেতু পশ্চিম দিকে, তাই কিবলা বা পশ্চিম দিকে থুথু ফেলাটা কি জায়েজ, নাকি এতে কোনো গুনাহর শামিল হতে হয়?
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, কিবলা বা পশ্চিম দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে থুথু ফেলা যাবে না। এটা গুনাহর শামিল। কারণ হাদিসে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কিবলার দিকে থুথু ফেলল, কিয়ামাতের দিন সে তার দুই চোখের মাঝে (কপালে) ওই থুথু নিয়ে উপস্থিত হবে। (ইবনে হিব্বান, মুসতাদরাকে হাকেম, সাহিহুল জামি : ৬১৬০)
অন্যদিকে বোখারি শরিফের এক হাদিসে হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিবলার দিকে (দেয়ালে) ‘কফ’ দেখলেন। এটা তার কাছে কষ্টদায়ক মনে হলো। এমনকি তার চেহারায় তা ফুটে উঠল। তিনি উঠে গিয়ে নিজ হাত দিয়ে তা পরিষ্কার করলেন। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন তার ও কিবলার মাঝখানে তার রব আছেন। কাজেই, তোমাদের কেউ যেন কিবলার দিকে থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তার বাম দিকে বা পায়ের নিচে তা ফেলে। এ সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার চাদরের আঁচলে থুথু ফেললেন এবং এক অংশকে অন্য অংশের ওপর ভাঁজ করে বললেন, অথবা সে এরূপ করবে। (বোখারি : ৪০৫, মুসলিম : ৪৯৩, নাসায়ি : ৩০৮, আবু দাউদ : ৪৬০)
প্রসঙ্গত, কেবলা বা পশ্চিম দিকে পা দেওয়া থেকেও বারণ করেছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেন, কেবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমানো, বসা বা শোয়া ওলামায়ে আহনাফের মতে মাকরুহ। অনুচিত। কারণ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম কেবলার দিকে ফিরে প্রস্রাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম-এর এই নিষেধাজ্ঞা ছিল কেবলার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের খাতিরে। আর কেবলা বা কাবার দিকে পা লম্বা করে বসলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে অসম্মান হয়। তাই কোনো ওজর ছাড়া কাবার দিকে ইচ্ছে করে পা দিয়ে বসা অনুচিত ও আদবের খেলাফ।
তবে এ বিষয়ে সৌদি উলামায়ে কেরামদের মত ভিন্ন। আহমাদুল্লাহ জানান, সৌদি আলেমদের মতে কেবলার দিকে পা দিয়ে বসলে কোনো অসুবিধা নেই। তাদের দাবি, কোরআন-হাদিসের কোথাও এ ব্যাপারে (পা দেওয়া) সরাসরি নিষেধ করা হয়নি।
আহমাদুল্লাহ আরও বলেন, যেহেতু এটা ইজতেহাদি বিষয়, তাই সতর্কতা ও অধিকতর নিরাপদ মত হলো, কেবলার দিকে ইচ্ছাকৃত পা দিয়ে না বসা।
মন্তব্য করুন