

ইসলামী সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে দেশে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করেছে ‘ইসলামিক স্মার্ট সিটি’। এতে দেশের নগর পরিকল্পনা ও আবাসন খাতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকার হোটেল লে মেরিডিয়ানে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠান শুরু হয় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে। সূচনা বক্তব্যে ইসলামিক স্মার্ট সিটি করার লক্ষ্য এবং সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হয়।
উদ্যোক্তাদের সূত্রে জানা গেছে, মাওয়া রোড সংলগ্ন শ্রীনগরের ষোলঘরে হচ্ছে ‘পুষ্প ইসলামিক স্মার্ট সিটি’ ও রাজধানী ঢাকার মিরপুরে হচ্ছে ‘মিরপুর ইসলামিক স্মার্ট সিটি’। এই শহর নির্মাণে মূল লক্ষ্য, বাসিন্দাদের জন্য সর্বোচ্চ আধুনিক নিরাপদ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জীবনযাত্রার প্রতিটি স্তরে ইসলামী আদর্শ, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি নিশ্চিত করা। ইসলামী পরিবেশ নিশ্চিত করে আধুনিক, টেকসই এবং আরামদায়ক আবাসন প্রকল্প তৈরি করা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইসলামিক স্মার্ট সিটিতে থাকছে মসজিদ, মাদ্রাসা, শিশুদের জন্য ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধভিত্তিক স্কুল-গবেষণাকেন্দ্র, হালাল অর্থনীতি জোন, অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যব্স্থা এবং নারী-পুরুষের জন্য পৃথক শালীন বিনোদন ও খেলার জায়গা।
ইসলামিক স্মার্ট সিটির ফাউন্ডার ডিরেক্টর হাসিবুল হক মামুন বলেন, ‘আমরা এমন একটি শহর তৈরি করতে চাই যেখানে মানুষ আধুনিক জীবন উপভোগ করবে, কিন্তু তাদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ সুরক্ষিত থাকবে। এটি শুধু একটি আবাসন প্রকল্প নয়, বরং একটি আদর্শ জীবনযাত্রার মডেল। ইসলামিক সিটির পরিবেশটা ফাইভ স্টার হোটেলের মতো হবে। প্রথম পর্যায়ে ঢাকার কয়েকটি প্রবেশ মুখে প্যারালালি ছয়টি ইসলামিক স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা হবে। পরে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে এক বা একাধিক ইসলামিক স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকের মনেই একটা সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা থাকে এমন একটি আবাসন, যেখানে আধুনিক জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে, কিন্তু তা আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস বা মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। আমরা প্রায়ই ভাবি, আধুনিক হতে গেলে বুঝি দ্বীন থেকে দূরে সরতে হয়। সেই ধারণা বদলে দিতে এবং আপনাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ ‘ইসলামিক স্মার্ট সিটি’। আমরা এই সিটির মাধ্যমে ব্যবসা নয়, মরে গেলেও সওয়াব অর্জন করতে চাই।’
ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মাহমুদ হাসান বলেন, ‘বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা নিজেদের একবার প্রশ্ন করি, আমরা আমাদের সন্তানদের কেমন শৈশব উপহার দিচ্ছি? চার দেয়ালের বন্দি জীবন আর হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোন—এটাই কি তাদের ভবিষ্যৎ? আমি এবং আমার টিম যখন এই প্রজেক্টের ডিজাইন করছিলাম, তখন আমাদের মাথায় একটাই চিন্তা ছিল, আমাদের বাচ্চারা যেন ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন নিরাপদ আবাসন পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের সন্তানরা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় নয়; বরং বাস্তব পৃথিবীর মাটিতে পা রাখুক। তারা যেন যান্ত্রিকতার শিকল ছিঁড়ে দৌড়ঝাঁপ করে বড় হতে পারে। তাদের জন্য আমরা রেখেছি বিশাল খেলার মাঠ। বিকেলে খেলা শেষে মাগরিবের আজান শুনলে তারা যেন দলবেঁধে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারে। আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যেখানে আধুনিক প্রযুক্তির সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে; কিন্তু তা আমাদের শিকড় ও বিশ্বাস থেকে দূরে সরাবে না। আমাদের লক্ষ্য হলো, এই দ্বীনি ও নির্মল পরিবেশে বেড়ে উঠে তারা যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। তারা যেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি ইসলামিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতায় বলীয়ান হয়ে গড়ে ওঠে।’
মন্তব্য করুন