

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক ভবনগুলোর দেয়ালে জন্মেছে পরগাছা। এতে খসে পড়ছে পলেস্তারা, ফাটল ধরেছে বিভিন্ন অংশে, পচে খুলে পড়ছে দরজা-জানালা। বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই ছাদ চুঁইয়ে ঝরে পানি, আর তাতে ভবনের ভেতরের অংশ শ্যাওলার আবরণে হয়েছে পরিত্যক্ত। ভবনগুলোতে রাত হলে দেখা যায় চোরের আনাগোনা।
এমন চিত্র কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৮টি আবাসিক ভবনের। কয়েক দফা সংস্কারেও সেগুলো হয়নি বসবাসযোগ্য। তাই ডাক্তার-কর্মচারীদের কেউ থাকেন না হাসপাতাল কমপ্লেক্সের ভেতরে। সবাই থাকেন দূরে ভাড়া বাসায়। আর এতে ব্যাহত হচ্ছে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১৯৭৪ সালে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সময় ডাক্তার ও কর্মচারীদের জন্য ৮টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়। গত ৮-১০ বছর আগে সেগুলো পুরোপুরি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ৩টি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় বহু আগে। বর্তমানে ৭৮ জন ডাক্তার কর্মচারীর মধ্যে ২৭ জন ডাক্তার। তাদের কেউ থাকেন না আবাসিক এই ভবনগুলোতে। তবে জরুরি সেবা দিতে ৩/৪ জন নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পরিবার নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই থাকেন জীর্ণ-শীর্ণ পুরোনো এসব ভবনে। ছিনতাইকারীদের উৎপাতে থাকেন আতঙ্কে।
জেলার অন্যান্য উপজেলায় ডাক্তারদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হলেও চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তা হয়নি। যেখানে প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন ৮০০ থেকে ১০০০ রোগী। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে নিয়মিত ভর্তি থাকেন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী। ৪২ কিলোমিটার মহাসড়ক এলাকায় দুর্ঘটনায় আহত রোগীর চাপ অনেক বেশি। কিন্তু আবাসন সুবিধা না থাকার কারণে জরুরি সময়ে ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
হাসপাতালের কর্মচারী মহসিন পরিবার নিয়ে থাকেন একটি ভবনে। সরেজমিন ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ভবনের পলেস্তারা খসে পড়েছে। মহসিন পলেস্তারার আঘাত থেকে বাঁচতে সিলিংয়ে ঝুলিয়েছেন কাপড়। খসে পড়া পলেস্তারায় সেই কাপড়গুলোও ছিঁড়ে পড়ার উপক্রম।
হাসপাতালের হিসাবরক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি পরিবার নিয়ে হাসপাতালের বাইরে থাকি। দরজা-জানালা বিহীন এসব ভাঙা ভবনে থাকা অসম্ভব।
হাসপাতালের মিডওয়াইফ জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমি থাকার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পলেস্তারা ঝরে পড়ে তাই এখন বাইরে থাকি।
তবে সিনিয়র স্টাফ নার্স হাসিনা আক্তার বললেন, জরুরি সেবা দিতে ঝুঁকি নিয়েই আমি হাসপাতালের পুরোনো একটি ভবনে থাকি। আমরা ২৪ ঘণ্টা প্রসূতিসেবা দিয়ে আসছি।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মেজবাউল আলম কালবেলাকে বলেন, আমাদের জন্য বরাদ্দ একটি ভবন মোটামুটি ভালো ছিল। ২৪-এর ভয়াবহ বন্যায় সে ভবনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সেই ভবনেও এখন কেউ থাকে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমি যোগদান করার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। যদি ডাক্তার ও কর্মচারীদের জন্য হাসপাতাল কমপ্লেক্সে আবাসন ব্যবস্থা করা হয় তাহলে সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে। উপজেলার আরও অধিক মানুষ সেবা নিতে পারবে।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মোহাম্মদ বশির আহমেদ কালবেলাকে বলেন, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন