এতদিন ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ মানেই বাংলাদেশের আধিপত্য থাকবে ধরে নেয়া হতো। তবে সে আধিপত্য আর থাকলো না। চট্টগ্রামের সাগরিকায় সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে ৩৩২ রানের বিশাল টার্গেটে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ১৮৯ রানেই। ফলে ১৪২ রানের হারে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ৯ বছর পর এক বছরে একাধিক সিরিজ হারল বাংলাদেশ।
সিরিজে সমতা ফেরাতে রেকর্ড রান তাড়া করে জিততে হতো বাংলাদেশকে। সেটির কাছাকাছিও যেতে পারেনি টাইগাররা। রান তাড়ায় কোনো পর্যায়েই মনে হয়নি, ম্যাচটি জিততে পারে বাংলাদেশ। ৯ ওভারের মধ্যেই ৩ উইকেট হারানোর চাপ থেকে বেরোতে পারেনি আর তারা।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে টাইগার অধিনায়ক লিটন কুমার দাস আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ১৩ রানে।
ফজলহক ফারুকির শর্ট লেন্থের বলটি ঠিকঠাক খেলতে পারেননি লিটন। মাথার ওপর বল ভাসিয়ে দেন তিনি, ৩০ গজের ভেতরেই ক্যাচ ধরেন মোহাম্মদ নবি। বাংলাদেশের দলীয় রান তখন ১৫। লিটন ১৩ রানের মধ্যে চারই মেরেছিলেন ৩টি।
লিটন ফিরে যাওয়ার পর যথারীতি ওয়ানডাউনে খেলতে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের অন্যতম ভরসার প্রতীক তিনি। কিন্তু এদিন আর দলের ভরসা হয়ে উঠতে পারেননি এ ব্যাটার। লিটন ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই মুজিবের বলে বোল্ড হন তিনি। ৫ বলে শান্ত করেন এক রান।
দুই বছর পর ওয়ানডে খেলতে নেমে ভালো কিছু করতে পারলেন না মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ফজলহক ফারুকির বল স্টাম্পে টেনে তিনি আউট হলেন ২১ বলে ৯ রান করে।
মাত্র ২৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপ ধীরে ধীরে সামাল দিতে থাকেন সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয় মিলে। কিন্তু দলীয় ৬৫ রানের সময় রশিদ খানের গুগলি বুঝতে না পেরে বোল্ড হন হৃদয় । ৩৪ বলে হৃদয় করেন ১৬ রান। হৃদয় আউট হওয়ার কিছুক্ষণ পর ফেরেন সাকিব। নবির বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে উইকেট হারান তিনি। ২৯ বলে ২৫ রান আসে সাকিবের ব্যাট থেকে। আফিফ ক্রিজে এসে এক বলের বেশি খেলতেই পারেননি। রশিদ খানের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি।
এরপর সপ্তম উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনের ৮৭ রানের জুটিতে অসম্ভব জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু বেশিদূর দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি মিরাজ। ৪৮ বলে ২৫ রান করে মুজিবকে ওয়াইড লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে রহমত শাহর হাতে ধরা পড়েন তিনি।
অন্যদিকে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৫০তম ম্যাচ খেলতে নেমে ৪৫তম ফিফটি তুলে নেন মুফফিক। তার লড়াকু ইনিংসটি কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। মুশফিক থামেন ব্যক্তিগত ৬৯ রানের ইনিংস খেলে। ৮৫ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৬টি চার। তার আউটের সঙ্গে থামে বাংলাদেশের ইনিংসও।
এদিকে এদিন প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৩১ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান। ওপেনিং জুটিতেই আফগানদের শক্ত ভিত গড়ে দেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। তাদের জুটিতে আসে ২৫৬ রান। আফগানদের ওয়ানডে ইতিহাসে যেকোনো উইকেটে এটি সর্বোচ্চ রানের জুটি। ১২৫ বলে ১৩ চার ও ৮ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ১৪৫ রান করে আউট হন গুরবাজ।
এদিকে আরেক ওপেনার ইব্রাহিম ১১৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ১০০ রান করেন । বাকিরা অবশ্য খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। মোহাম্মদ নবি অপরাজিত ছিলেন ১৫ বলে ২৫ রান করে। টাইগার বোলারদের মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, সাকিব ও মিরাজ ২টি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ৩৩১/৯ (গুরবাজ ১৪৫, ইব্রাহিম ১০০, সাকিব ৫০/২)।
বাংলাদেশ: ৪৩.২ ওভারে ১৮৯ (সাকিব ২৫, মুশফিক ৬৯, মিরাজ ২৫, হাসান ৪, ফারুকি ২২/৩)।
মন্তব্য করুন