রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে শনিবারের রাতটি এক মোড় ঘোরানো অধ্যায়। লা লিগার শেষ ম্যাচে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে যেমন উদযাপন হয়েছে কিলিয়ান এমবাপ্পের জোড়া গোল, তেমনই সান্তিয়াগো বার্নাব্যু কান্নায় বিদায় জানিয়েছে দুই কিংবদন্তি—ম্যানেজার কার্লো আনচেলত্তি ও মিডফিল্ডের জাদুকর লুকা মড্রিচকে।
১৫টি ট্রফির রূপকার, ব্রাজিল যাচ্ছেন আনচেলত্তি
৬৫ বছর বয়সী ইতালিয়ান কোচ আনচেলত্তি বিদায় নিচ্ছেন রিয়ালের ডাগআউট থেকে, এবার গন্তব্য ব্রাজিল জাতীয় দলের ডাগআউট। দুই দফায় ৩৫০টিরও বেশি ম্যাচ পরিচালনা করে রিয়ালের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তিনি।
তার ঝুলিতে রইল—৩টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৩টি ক্লাব বিশ্বকাপ, ২টি লা লিগা, ২টি কোপা দেল রে, ৩টি সুপার কাপ এবং ২টি স্প্যানিশ সুপার কাপ—মোট ১৫টি শিরোপা।
ম্যাচ শেষে আবেগঘন ভাষণে আনচেলত্তি বলেন, ‘এই ক্লাবকে কোচিং দেওয়া ছিল এক আনন্দের সফর। এটা আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অধ্যায়।’
মড্রিচের চোখে জল, দর্শকদের করতালিতে শেষ অধ্যায়
৩৯ বছর বয়সী ক্রোয়াট মিডফিল্ডার লুকা মড্রিচ—যিনি রিয়ালের হয়ে খেলেছেন টানা ১৩ মৌসুম, ৫৯১ ম্যাচে করেছেন ৪৩ গোল—শেষবারের মতো মাঠে নেমেছিলেন বার্নাব্যুর আলোয়। তার বিদায়ের মুহূর্তে খেলা থেমে গিয়েছিল, দুই দলের খেলোয়াড়রা তৈরি করেছিলেন গার্ড অব অনার।
‘যে মুহূর্তটা আমি চাইনি, অবশেষে তা এসেই গেল। তবে এটা ছিল অসাধারণ এক যাত্রা,’—ম্যাচ শেষে বলেন মড্রিচ।
ভক্তরা দাঁড়িয়ে করতালি দিয়েছেন, ‘ধন্যবাদ লুকা’ লেখা ব্যানারে ছেয়ে যায় গ্যালারি। মাঠের পাশে স্ত্রী-সন্তান, সতীর্থদের সাথে আবেগঘন আলিঙ্গনে মড্রিচ—পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন পুরনো সতীর্থ ও বন্ধু টনি ক্রুস।
মড্রিচের রিয়াল ক্যারিয়ার:
— সর্বমোট ২৮টি শিরোপা।
এখানেই থেমে যাচ্ছে না তার রিয়াল অধ্যায়। আগামী মাসে ক্লাব বিশ্বকাপে শেষবারের মতো রিয়ালের হয়ে মাঠে নামবেন মড্রিচ।
এমবাপ্পে-ঝলকে জয়, সোসিয়েদাদ ও রেফারিরও বিদায়
ম্যাচের দুই গোলই আসে কিলিয়ান এমবাপ্পের পা থেকে—৩৮ ও ৮৩ মিনিটে। এই জোড়া গোলে তার লা লিগা গোলসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ৩০-এ, পাঁচ গোলের ব্যবধানে পিছনে ফেলেছেন রবার্ট লেভানডভস্কিকে।
লা লিগায় দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত করে মৌসুম শেষ করল রিয়াল, যেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বার্সেলোনা। রোববার বিলবাওর বিপক্ষে মাঠে নামবে বার্সা।
এই ম্যাচটি আরও কয়েকজনের বিদায় বয়ে এনেছে—সোসিয়েদাদ কোচ ইমানল আলগুয়াসিল তার সাড়ে ছয় বছরের অধ্যায় শেষ করলেন, আর রেফারি মারিও মেলরো লোপেজ পরিচালনা করলেন নিজের শেষ ম্যাচ।
এক ম্যাচ, তিন বিদায়—বার্নাব্যু সাক্ষী থাকল ইতিহাসের
কখনো কখনো একটি ম্যাচ শুধু স্কোরলাইনে সীমাবদ্ধ থাকে না—শনিবারের বার্নাব্যু তেমনই এক রাত। ট্রফি-ভরা জীবনকে বিদায় জানালেন আনচেলত্তি ও মড্রিচ, গ্যালারি জানাল তাদের ভালোবাসা। রিয়াল মাদ্রিদ—নতুন অধ্যায়ে পা রাখার আগে—নম্র শ্রদ্ধায় ঝুঁকে পড়ল তার দুই কিংবদন্তির সামনে।
মন্তব্য করুন