

পুরো মৌসুমজুড়ে বারবার সুযোগ এসেছে। বারবার সেই সুযোগ হাতছাড়া করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। মঙ্গলবার রাতে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আবারও সেই একই চিত্র—টপ ফোরে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ, প্রতিপক্ষে দেড় দশক ধরে না জেতা এভারটন, তাও আবার ৭৭ মিনিট ১০ জন নিয়ে খেলেছে তারা। তার পরও রুবেন আমোরিমের দল মাঠ ছেড়েছে ১-০ গোলে লজ্জাজনক পরাজয়ের হতাশা নিয়ে।
এমন এক রাতে ইউনাইটেডের পারফরম্যান্স যেন পুরো এক বছরের অগ্রগতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিল।
ম্যাচ শুরুর পর থেকেই ইউনাইটেডের তালগোল পাকানো ফুটবল চোখে পড়ছিল। এভারটন আগস্টের পর প্রথম কোনো অ্যাওয়ে ম্যাচ জয়ের আশাও করছিল না—কিন্তু প্রথম ১০ মিনিটেই তারা ওল্ড ট্র্যাফোর্ডকে নীরব করে দেয়। সেই সময় এভারটন ফাইনাল থার্ডে ১৪টি সফল পাস দেয়, যেখানে ইউনাইটেডের পাস ছিল মাত্র একটি।
তারপর আসে ম্যাচের অদ্ভুত মুহূর্ত। ব্রুনো ফার্নান্দেজের একটি শট ব্লকের পর নিজ দলের সহখেলোয়াড় মাইকেল কিনের সঙ্গে তর্কে জড়ান ইদ্রিসা গেইয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মাঠে দেখা যায় চড়—রেফারি সরাসরি লাল কার্ড দেখান গেইয়কে।
৭৭ মিনিট ১০ জন থাকা প্রতিপক্ষ—সাধারণত এখান থেকেই ম্যাচের গতি বদলে দেয় বড় দলগুলো। কিন্তু ইউনাইটেড আরও বিশৃঙ্খল, আরও গড়পড়তা।
৩০ মিনিটে দুর্বল ডিফেন্সের সুযোগ নিয়ে কিয়ারন ডিউসবেরি-হল দুর্দান্ত এক দীর্ঘ দূরত্বের শটে ম্যাচে একমাত্র গোলটি করেন। এরপর বারবার আক্রমণ গড়েও গোল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শেষ মুহূর্তে ম্যাথাইস ডি লিটের শট ঢিলেঢালাভাবে পিকফোর্ডের হাতে জমা পড়া—এটাই যেন পুরো ম্যাচের প্রতিচ্ছবি।
ম্যাচে ইউনাইটেডের ২৫টি শটের মধ্যে মাত্র ৬টি ছিল টার্গেটে। বাকি সবই অগোছালো, পরিকল্পনাহীন, অবিশ্বাস্যভাবে হতাশাজনক।
ঠিক এক বছর আগে এই সময় আমোরিম দায়িত্ব নেন। ম্যাচ-ডে প্রোগ্রামে তিনি লিখেছিলেন—‘এ মৌসুমে আমরা সত্যিই এগিয়ে যাওয়ার অবস্থানে আছি।’
কিন্তু ম্যাচ শেষে স্বীকার করলেন ভিন্ন বাস্তবতা, ‘আমরা আজ যা খেলেছি, তাতে হারারই কথা ছিল। আমরা এখনো সেই মানের কাছেও নেই যেখানে ইউনাইটেডকে থাকা উচিত।’
এদিকে এভারটন কোচ ডেভিড ময়েস আনন্দ চাপতে পারেননি—‘১০ জন নিয়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে জেতা? অবিশ্বাস্য! ছেলেরা লড়াই করেছে, প্রতিটি ব্লক, প্রতিটি হেডার… সবই ছিল নিখুঁত।’
এক বছর পরও ইউনাইটেড যেন সেখানেই রয়ে গেছে—একটি দল যা সবকিছু আবার নুতন করে শুরু করতে হয়। স্কোয়াডে তারকা আছে, সুযোগ আসে, প্রতিপক্ষ ভুল করে, ১০ জন হয়ে যায়—তবুও জয়ের পথ খুঁজে পায় না ইউনাইটেড।
রাতটি শুধু একটি হারের নয়—এটি ছিল ইউনাইটেডের এগিয়ে যাওয়ার আরেকটি সুযোগ নষ্ট হওয়ার গল্প।
আর প্রশ্নটা আগের মতোই দাঁড়িয়ে থাকে—কোথা থেকে শুরু করবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড?
মন্তব্য করুন