একদল বর্তমানে ইউরোপ সেরা, আরেকদল ইউরোপের সবচেয়ে বড় ফুটবল প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বেশিবার শিরোপা জয়ী। স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপের অন্যতম সেরা এই দুই দলের মধ্যে লড়াইটা উপভোগ্যই হওয়ার কথা। ম্যাচটিতে হয়েছেও তাই। পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচটির ভাগ্য একেক সময় একেক দলের দিকে গিয়েছে। কখনো এগিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ আবার কখনো ম্যানচেস্টার সিটি। তবে শেষ পর্যন্ত সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর এই লড়াইয়ে কোন দলই জয় ছিনিয়ে আনতে পারিনি।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) রিয়াল মাদ্রিদের হোম গ্রাউন্ড সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগের খেলায় রিয়াল মাদ্রিদ বনাম ম্যানচেস্টার সিটির মধ্যকার হাইভোল্টেজ ম্যাচ ৩-৩ গোলে ড্র হয়েছে।
মাঠে এসে দর্শকরা ঠিকভাবে বসতে না বসতেই গোল পেয়ে যায় গতবারের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। তবে গোল খেয়ে ভরকে না যে উল্টো পাল্টা আক্রমণে দুই গোল দিয়ে লিড পায় রিয়াল মাদ্রিদ। এরপর ৬৬ মিনিটে ফিল ফোডেনের দুর্দান্ত গোলে সমতা ফেরায় সিটি। শুধু তাই নয়, পাঁচ মিনিটের মধ্যে এগিয়েও যায় তারা। পিছিয়ে পড়ে ফেদে ভালভার্দের গোলে জয় সমতা আনে রিয়াল। ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হওয়ায় ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় দুই দলকে।
ছয় গোলের এই শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে প্রথম গোলটি আসে ম্যাচের মাত্র দুই মিনিটের মাথায়। রিয়ালের করা ফাউল থেকে বুদ্ধিদীপ্ত এক ফ্রি-কিকে সিটিকে লিড এনে দেন বার্নাদো সিলভা। রিয়াল ভক্তদের মনেও তখন নির্ঘাত গত সিজনের স্মৃতি আবার ফিরে আসছিল। তবে দশ মিনিটের মাথায় সেই স্মৃতি দূরে ঠেলে দেয় কামাভিঙ্গা-রদ্রিগোরা। দুই মিনিটের ঝড়ে সিটিকে ঠেলে সরিয়ে লিড নেয় লস ব্লাঙ্কোসরা।
স্কোরলাইন ২-১ হওয়ার পর দুই দলই একটু বুঝে শুনে খেলতে থাকে। তবে এর পরেও আক্রমণ হচ্ছিল। মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা সহজ কিছু সুযোগ মিস না করলে প্রথমার্ধেই বড় লিড নিয়ে বিরতিতে যেতে পারত ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা। তবে ভিনিসিয়ুস-রদ্রিগোরা গোলের সুযোগ কাজে না লাগানোয় ২-১ স্কোরলাইনেই প্রথমার্ধ শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধেও রিয়ালের সামনে সুযোগ আসছিল। তবে বারবার ব্যর্থ হয় দলটি। ৫৩তম মিনিটে ডি-বক্সে দুজনের বাধা এড়িয়ে জুড বেলিংহ্যামের নেওয়া শট দূরের পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে যায়। আর বক্সের মধ্যে থেকেই ভিনিসিউসের শট ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে যায়।
এলোপাথারি ফুটবলে সুযোগ হারায় সিটিও। তবে ৬৬ মিনিটে তাদের সমতায় ফেরান দারুণ ছন্দে থাকা ফিল ফোডেন। বক্সের বাইরে থেকে কড়া বাকানো এক শটে পরাস্ত হয় রিয়াল গোলকিপার লুনিন।
৭১ মিনিটে বার্নাব্যুকে স্তব্ধ করে এগিয়ে যায় সিটি। বক্সের মধ্যে থেকে গ্রিলিশের কাটব্যাক ধরে একটু জায়গা বানিয়ে ২০ গজ দূর থেকে বাঁকানো শটে সিটিকে লিড এনে দেন ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার গাভার্দিওল।
ম্যাচে অবশ্য তখনও চমক ছিল। পিছিয়ে পড়ার ৮ মিনিটের মধ্যে আবারও সমতায় ফেরে রিয়াল। এবার গোল করেন ভালভার্দে। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে বাঁ দিক থেকে ডি-বক্সে ক্রস বাড়ান ভিনিসিউস, আর ছুটে এসে বুলেট গতির ভলি করেন ভালভার্দে। গোলরক্ষকসহ সবাইকে ফাঁকি দিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে বল জড়ায় জালে।
নির্ধারিত সময়ে একদম শেষদিকে জয় ছিনিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি দানি কারভাহাল। ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় স্বাগতিকদের।
ইতিহাদ স্টেডিয়ামের পরের সপ্তাহে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচেই নির্ধারিত হবে কোন দল পাবে সেমিফাইনালের টিকিট।
মন্তব্য করুন