চিকিৎসা পরামর্শে এখন নতুন ভরসা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। কেউ কেউ গুগল সার্চের বদলে এখন সরাসরি এআইয়ের কাছে জানতে চান শরীরের উপসর্গের কারণ বা চিকিৎসা। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা এতটাই গুরুতর, সেখানে এআইয়ের পরামর্শের ওপর নির্ভর করা ভয়াবহ ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।
তারা জানান, ডিজিটাল যুগে অনেকেই সামান্য জ্বর, মাথাব্যথা বা শরীর খারাপ হলে প্রথমেই চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে এআই চ্যাটবটের সহায়তা নেন। কেউ কেউ আবার তাদের উপসর্গ লিখে ‘এআই ডায়াগনোসিস’ খোঁজেন। এতে অনেক সময় ভুল তথ্য, অতিরঞ্জিত বিশ্লেষণ বা অপ্রাসঙ্গিক পরামর্শ পাওয়া যায়, যা রোগীর মানসিক চাপ বাড়ায়, আবার চিকিৎসা নিতে দেরি করিয়ে বিপদও ডেকে আনতে পারে।
ভারতের গ্লিনিগলস হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (ইন্টারনাল মেডিসিন) ডা. মঞ্জুষা আগরওয়াল বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে একেবারেই এআইয়ের পরামর্শ নেওয়া উচিত নয়। এতে সুস্থ হওয়ার বদলে উল্টো বিপদ বাড়তে পারে।’
তার ভাষ্য
এআই কখনো শারীরিক পরীক্ষা করতে পারে না। প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক টেস্ট করাতে পারে না। আপনার সম্পূর্ণ চিকিৎসা ইতিহাস জানে না। অযথা ভয় বা মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে এবং চিকিৎসা পেতে দেরি করিয়ে দিতে পারে। ভুল তথ্য বা ভুল রোগনির্ণয়ের ঝুঁকি বাড়ায়।
কাজেই বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা বলছেন, অন্তত ৬টি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় এআইয়ের পরামর্শ না নেওয়াই ভালো।
১. বুকের ব্যথা
হঠাৎ বুকব্যথা শুরু হলে এক মুহূর্তও দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এটি হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে শুধু ডাক্তারই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ও সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন—এআই নয়।
২. স্ট্রোকের লক্ষণ
মাথা ঘোরা, মুখ বেঁকে যাওয়া, হাত বা পা দুর্বল হয়ে পড়া, জড়ানো কথা বলা বা হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া—এসবই স্ট্রোকের ইঙ্গিত হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, ‘স্ট্রোকের চিকিৎসায় প্রতিটি সেকেন্ড অমূল্য।’ তাই কোনোভাবেই এআইয়ের পরামর্শ নিয়ে সময় নষ্ট করা ঠিক নয়।
৩. তীব্র পেটব্যথা
হঠাৎ তীব্র পেটব্যথা হতে পারে অ্যাপেন্ডিসাইটিস, পিত্তথলিতে পাথর বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের লক্ষণ। এআই সাধারণ ব্যথার পরামর্শ দিতে পারে, কিন্তু প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে পারবে না। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
৪. উচ্চজ্বরের সঙ্গে অজ্ঞান ভাব বা খিঁচুনি
উচ্চজ্বরের সঙ্গে বিভ্রান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা খিঁচুনি দেখা দিলে এটি গুরুতর সংক্রমণ বা মেনিনজাইটিসের লক্ষণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা জরুরি। এআই পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নয়।
৫. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া বা দীর্ঘদিনের ক্লান্তি
অকারণে ওজন কমে যাওয়া, ক্রমাগত ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনেক সময় বড় কোনো অসুস্থতার ইঙ্গিত দেয়—যেমন থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, এমনকি ক্যানসারও হতে পারে। এআই এসব উপসর্গ দেখে সাধারণ ডায়েট টিপস দিতে পারে, কিন্তু সঠিক মেডিকেল বিশ্লেষণ করতে পারে না।
৬. শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে একদমই সময় নষ্ট করা যাবে না। এটি অ্যাজমা, ফুসফুসে সংক্রমণ বা হার্ট ফেইলিওরের লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসকের জরুরি তত্ত্বাবধান ছাড়া এমন অবস্থায় এআইয়ের পরামর্শ বিপজ্জনক।
কখন এআইয়ের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে?
ডা. আগরওয়ালের মতে, সাধারণ জীবনধারাসংক্রান্ত পরামর্শ, সুষম খাদ্যাভ্যাস, ফিটনেস টিপস বা প্রাথমিক ল্যাব রিপোর্ট বোঝার ক্ষেত্রে এআই সহায়ক হতে পারে। তবে যেকোনো তথ্য অনুসরণ করার আগে নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতেই হবে।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
মন্তব্য করুন