উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এক ব্যতিক্রমী ঘোষণায় বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। দেশের পূর্ব উপকূলে তিনি উদ্বোধন করেছেন এক বিলাসবহুল সমুদ্রসৈকত রিসোর্ট, যেখানে একসাথে ভ্রমণ করতে পারবেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ একে বলছে ‘কোরিয়ার গর্ব-পর্যটন নগরী’।
কিম জং উন নিজেই ওনসানে বেড়ে উঠেছেন। সেখানে দেশের অভিজাতদের অনেকেরই ব্যক্তিগত বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। এক সময়ের মিসাইল পরীক্ষার স্থান হিসেবে পরিচিত এই শহরটিকে তিনি পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করতে চান।
কেসিএনএ দাবি করেছে, ৪ কিলোমিটার (২.৫ মাইল) দৈর্ঘ্যের এই রিসোর্টে প্রতিদিন ২০ হাজার পর্যটক থাকতে পারবেন। সেই সাথে হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমল ও ওয়াটার পার্ক থাকবে। আগামী ১ জুলাই থেকে এটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
জানা গেছে, এই মুহূর্তে এখানে শুধু অভ্যন্তরীণ পর্যটকরাই ভ্রমণ করতে পারবেন। বিদেশি বা আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য এটি কবে খুলে দেওয়া হবে তা নিশ্চিত নয়। তবে কিম যে তার গোপনীয় কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থায় বিদেশি পর্যটনকে উৎসাহিত করতে চাচ্ছেন তা এই বিশাল প্রকল্পের মাধ্যমে এখন অনেকটা স্পষ্ট।
দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়ংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিম ইওল-চুল বলছেন, ‘এটি কিম জং উনের তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক আধুনিকতার প্রতীক, যার মাধ্যমে তিনি অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্প বলতে চান।’
কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন, এটি পিয়ংইয়ংয়ের জন্য আয়ের একটি সহজ উপায়। যদিও বিদেশি পর্যটকদের অনুমতি দেওয়া হয়, তাদের বেশিরভাগই আসেন চীন ও রাশিয়া থেকে- উত্তর কোরিয়ার দীর্ঘদিনের মিত্র দেশ।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, রাশিয়ার একটি ট্রাভেল এজেন্সি ইতিমধ্যে এই সমুদ্র শহরে ভ্রমণের জন্য ট্যুর প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। জুলাই ও আগস্টে মোট তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে- যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ১,৮৪০ ডলার।
পিয়ংইয়ং থেকে ফ্লাইটে তারা পৌঁছাবে ওনসানে, সেখানে চার রাত থেকে কাছের মাসিকরিয়ং স্কি রিসোর্টেও ভ্রমণ করবেন।
উত্তর কোরিয়া এর আগেও পর্যটনের চেষ্টা করেছে। ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ানদের জন্য কুমগাং পর্বত এলাকা খোলা হয়। এক দশকে প্রায় ২০ লাখ মানুষ সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালে একজন দক্ষিণ কোরিয়ান পর্যটক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হলে সব বন্ধ হয়ে যায়।
২০২২ সালে ওই এলাকা গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন কিম, একে আখ্যা দেন ‘পিছিয়ে পড়া ও নোংরা’ স্থান হিসেবে।
তবে ওনসান-কালমা রিসোর্টের উদ্বোধনে কিমের স্ত্রী রি সল জু এবং কন্যা কিম জু অ্যেও’র উপস্থিতি অনেককেই ভাবিয়েছে। এটি কি কেবল পর্যটন প্রকল্প, নাকি উত্তরাধিকার রক্ষার বার্তা? বিশ্লেষকদের মতে, কিমের পরিবারকে সামনে আনার উদ্দেশ্য- নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা এবং জাতির উন্নয়ন যাত্রাকে ‘পারিবারিক উত্তরাধিকার’-এর রূপ দেওয়ার জন্যই এই বিশাল আয়োজন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ ড. এডওয়ার্ড হাওয়েল বলেন, ‘কালমা এখনো আন্তর্জাতিক পর্যটনের ম্যাপে জায়গা পায়নি। আর উত্তর কোরিয়ার মতো নিয়ন্ত্রণ-নির্ভর দেশে সত্যিকারের পর্যটন কতটা সফল হবে, সেটি এখনই বলা যায় না।’
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ওনসান-কালমা রিসোর্ট কিম জং উনের এমন একটি ঘোষণা- যেখানে তিনি প্রমাণ করতে চান উত্তর কোরিয়াও উন্নত, আধুনিক, আন্তর্জাতিক পর্যটনের যোগ্য।
সূত্র : সিএনএন
মন্তব্য করুন