ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ছয় ব্যক্তিকে আটক করেছে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে ২৪ ও ২৫ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আফগান অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ‘ইসরায়েলের সহযোগী’ হিসেবে কড়া অবস্থান নিয়েছে তেহরান, শুরু হয়েছে ব্যাপক বহিষ্কার অভিযান।
২৪ জুন ইরানি টেলিভিশনে প্রচারিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ ইরানে ৪০২টি ‘ইসরায়েলি ড্রোন’ জব্দ করা হয়েছে। তবে ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ড্রোনগুলো ছিল সাধারণ বাণিজ্যিক মানের, বিস্ফোরক পরিবহনে অযোগ্য।
পরদিন প্রচারিত আরেক প্রতিবেদনে ছয় বন্দিকে জেল পোশাকে পেছন ফিরে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখানো হয়। তারা স্বীকারোক্তি দেন যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা সহযোগিতা শুরু করেন। এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি তাদের বলেছিলাম, আমি সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।’
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরানে তৈরি 'মিসাগ-৩' ক্ষেপণাস্ত্র, নতুন সামরিক ড্রোন 'শাহিন-১', চীনা ও যুগোস্লাভিয়ায় তৈরি মর্টার—যেগুলো সাধারণত ইরানের সেনাবাহিনীতেই ব্যবহৃত হয়। ফলে উদ্ধার অভিযান নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
মোসাদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ
১২ দিনের যুদ্ধের পর ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে আফগান অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। বলা হয়, কিছু আফগান ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছে, বোমা স্থাপন করছে এবং ড্রোন পরিচালনা করছে।
১৬ জুনের একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, কয়েকজন আফগানকে ইসরায়েলি ড্রোন পরিবহনের সময় আটক করা হয়েছে। ২৬ জুন প্রচারিত আরেক প্রতিবেদনে কয়েকজন আফগানকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বীকারোক্তি দিতে দেখা যায়, তারা তেহরানে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিস্ফোরণের পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইরানে প্রায় ৫০-৮০ লাখ আফগান অভিবাসী রয়েছে, যাদের অনেকেই অনিবন্ধিত। ২৭ জুন ইরানি গণমাধ্যমে জানানো হয়, পুলিশকে অবৈধ আফগান অভিবাসীদের তাড়িয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ বাসা ভাড়া দিলে সেই সম্পত্তি জব্দ করা হবে।
এই পরিস্থিতিতে, আফগানদের বিরুদ্ধে ইরানে দীর্ঘদিনের বৈষম্যমূলক মনোভাব আরও জোরদার হয়েছে। তবে এবারই প্রথম, তাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে কাজ করার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হলো।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, মাত্র এক মাসে ইরান থেকে ২ লাখ ৫৬ হাজারের বেশি আফগান নাগরিক নিজ দেশে ফিরে গেছেন। জুন মাসেই কোনো কোনো দিনে এককভাবে ২৮ হাজার আফগানকে দেশত্যাগ করতে দেখা গেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইরান প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার আফগানকে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। চলমান এই অভিযানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তাদের মতে, ফেরত পাঠানো অনেক আফগান শরণার্থী দেশটিতে গিয়ে নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে পারেন।
ইরান সরকার আগামী জুলাইয়ের মধ্যভাগ পর্যন্ত আফগানদের স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। এরপর যারা থেকে যাবেন, তাদের আটক ও জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হবে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, যেখানে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানরা আশ্রয়ের জন্য দেশান্তর করছে, সেখানে তাদের এভাবে অপরাধী বানানো আরও সংকট তৈরি করবে।
তথ্যসূত্র : ফ্রান্স২৪, বিবিসি
মন্তব্য করুন