কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শরণার্থীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে জার্মান সরকার

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

জার্মানিতে ২০২৪ সালে স্বীকৃত আশ্রয়প্রার্থী ও সুরক্ষার নিশ্চিত অধিকার পাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৩ লাখ। এর মধ্য দিয়ে জার্মানির জনসংখ্যা বেড়েছে চার দশমিক এক ভাগ। জার্মানিতে সুরক্ষা চাওয়া বেশির ভাগ মানুষ মূলত স্থল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশটিতে আসেন। তবে রক্ষণশীল সরকার এই সংখ্যা কমাতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে।

জার্মানির সেন্ট্রাল রেজিস্টার অব ফরেইন ন্যাশনালস জানিয়েছে, ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সুরক্ষা মর্যাদা পাওয়া মানুষের সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার বেড়েছে। এই পরিসংখ্যানে আশ্রয়প্রার্থী ও অস্থায়ী সুরক্ষা মর্যাদা পাওয়া মানুষকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জার্মানির ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য বলছে, ৩৩ লাখ স্বীকৃত শরণার্থীর মধ্যে ইউক্রেন থেকে আসা ১০ লাখেরও বেশি যুদ্ধ শরণার্থী রয়েছেন। সিরীয়দের সংখ্যা ৭ লাখ ১৩ হাজার। আফগানিস্তানের নাগরিকদের সংখ্যা তিন লাখ ৪৮ হাজার। ইরাকি আছেন এক লাখ ৯০ হাজার। তুরস্কের নাগরিকের সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার। আর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ৭৭ হাজার। তাদের মধ্যে অন্তত অর্ধেক এসেছেন সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়াসহ হর্ন অব আফ্রিকার অন্য দেশগুলো থেকে।

পরিসংখ্যান বলছে, ৮ কোটি ৩৩ লাখ মানুষের দেশ জার্মানির প্রতি ২৫ জনে একজন আশ্রয়প্রার্থী। তবে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্য বা অঞ্চলভেদে এই সংখ্যার তারতম্য হতে পারে।

শরণার্থীদের মধ্যে তারুণ্যের আধিক্য

পরিসংখ্যান বলছে, জার্মানিতে অবস্থানরত শরণার্থীরা জার্মানদের তুলনায় তরুণ৷ কারণ, ২০২৪ সালে শরণার্থীদের গড় বয়স ছিল ৩২ বছর৷ জার্মানির মোট জনসংখ্যার গড় বয়স ৪৫ বছর ছয় মাস।

জার্মানিতে ইউক্রেনীয়দের গড় বয়স ৩৫ বছর। সিরিয়ান এবং আফগান শরণার্থীদের গড় বয়স যথাক্রমে ২৮ এবং ২৭ বছরের একটু কম।

স্বীকৃত শরণার্থীদের অন্তত ৪৫ শতাংশ নারী৷ ইউক্রেনীয়দের মধ্যে নারীর সংখ্যা অন্তত ৬০ ভাগ। কারণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে বেশির ভাগ ইউক্রেনীয় পুরুষ দেশ ছাড়েননি বা তাদের ছাড়তে দেওয়া হয়নি।

পরিসংখ্যান আরও বলছে, জার্মানিতে স্বীকৃত শরণার্থীদের চার ভাগের এক ভাগ ১৮ বছরেরও কম বয়সী শিশু ও কিশোর-কিশোরী।

ইউরোপে সর্বোচ্চ সংখ্যক শরণার্থী জার্মানিতে

৩৩ লাখ শরণার্থীর মধ্যে ৮২ শতাংশের বা ২৭ লাখের বেশি মানুষের জার্মানিতে বসবাসের অনুমতি রয়েছে। আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছেন চার লাখ ২৭ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী।

১ লাখ ৭১ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তাদের দেশ ছেড়ে যেতে বলা হলেও তারা এখনো জার্মানিতেই রয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে জোর করে নির্বাসন বা স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন করতে এক মাস থেকে বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

আরও ১ লাখ ৩৬ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে তথাকথিত সহনশীলতা বা ডুলডুং-এর আওতায় জার্মানিতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মূলত এসব আশ্রয়প্রার্থীর আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর হয়নি। কিন্তু শারীরিক অবস্থাসহ ভাষাগত যোগ্যতা ও কাজ খুঁজে নেওয়ার বিশেষ বিবেচনায় তাদের প্রত্যাবাসন না করে জার্মানিতে অস্থায়ীভাবে ১৮ মাস থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আশ্রয়নীতিতে বড় পরিবর্তন চান চ্যান্সেলর ম্যার্ৎস

রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল সিডিইউ/সিএসইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস মাস দুয়েক আগে জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হয়েছেন। ক্ষমতাগ্রহণের পরপরই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আশ্রয় ইস্যুতে কঠোর হয়েছেন তিনি। শরণার্থীর সংখ্যা কমানোর ক্ষেত্রে বেশ মনোযোগী তার সরকার।

জার্মানিতে সুরক্ষা চাওয়া বেশির ভাগ মানুষ মূলত স্থল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশটিতে আসেন। জার্মানির সঙ্গে সেসব দেশেরই সীমান্ত রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ড ছাড়া অন্য দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। যদিও সুইজারল্যান্ড ইইউর ঘনিষ্ঠ অংশীদার। প্রতিটি দেশই নিরাপদ হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত।

ম্যার্ৎসের যুক্তি হলো, আশ্রয়প্রার্থীদের জার্মানিতে পৌঁছানোর আগে অন্য ইইউ দেশে (এবং সুইজারল্যান্ডে) তাদের আশ্রয় আবেদন করা উচিত। ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থীরা প্রথম যে ইইউ দেশে পৌঁছান সেখানে, তাদের আবেদন জমা দিতে হয়।

কিন্তু অনেক আশ্রয়প্রার্থী সেটা করেন না। বিশেষ করে পরিবারের সঙ্গে যোগ দিতে কিংবা যে অঞ্চলটিতে নিজের সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব আছে, আশ্রয়প্রার্থীরা সেখানেই পৌঁছাতে চান।

কিন্তু বর্তমান জার্মান সরকার সেই সুযোগটিকেও সীমিত করে আনছে। কারণ, প্রতিবেশী ৯টি দেশের সঙ্গে থাকা সীমান্তে কড়া পাহারার পাশাপাশি সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে দেশটি। প্রতিবেশী দেশগুলো এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেও নিজেদের অবস্থানে অনড় জার্মান সরকার।

আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ

চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেছিলেন, প্রতি বছর জার্মানিতে আশ্রয় চাইতে আসা মানুষের সংখ্যা এক লাখের নিচে রাখতে চান তিনি।

বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ট অবশ্য বলেছেন, বার্ষিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা দুই লাখের নিচে নামিয়ে আনতে চান তিনি।

জার্মানির সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ফোকাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অবশ্যই একটি দেশের শরণার্থীদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার একটি সীমা থাকে। আর তাই অতীতের ঊর্ধ্বসীমা নিয়ে কথা বলা সঠিক ছিল।

তিনি আরও বলেন, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ছয় লাখেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থীর আশ্রয় আবেদন নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়, ইইউ আইনের অধীনে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে।

ডোব্রিন্ট বলেছেন, এমন বাস্তবতায় আমরা তাত্ত্বিকভাবে দুই লাখের নিচে রাখার কথা বললেও আজকের দৃষ্টিকোণ থেকে এই সংখ্যাটিও অনেক বড়।

তিনি আরও বলেন, আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি নিয়মিত অভিবাসনের পথ শক্তিশালী করা প্রয়োজন। কারণ জার্মানির শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি প্রতিনিয়ত তীব্র হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই সংবিধানে যুক্ত করতে হবে : নাহিদ ইসলাম

আ.লীগ নেতার ছেলের বিয়ে, চিটাগাং ক্লাবের মূল ফটকে বৈষম্যবিরোধীদের অবস্থান

মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে আটক তিনজন ফিরেছেন, জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে : আসিফ নজরুল

‘আগামী নির্বাচনে আর কোনো প্রহসন চলবে না’

জুলাইয়ে শহীদ হতে না পারা আমার জন্য আফসোসের : আসিফ মাহমুদ

ভবিষ্যতে আ.লীগ বলে কোনো দল থাকবে না : রিপন

৬ ঘণ্টা পর খুলনা রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতির কা‌ছে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ

ইসকনের আলোচনায় নেতারা / বিএনপির ওপর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আস্থা রাখার আহ্বান

বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষের সভাপতি মুহাম্মদ প্রিন্স ও সা. সম্পাদক রাফিউর রহমান

১০

চট্টগ্রামে ৩ হাজার লিটার অকটেনসহ একজন আটক

১১

চট্টগ্রামে চালু হলো থাইল্যান্ডের মেডপার্ক হাসপাতালের অফিস

১২

একসঙ্গে ৩ কন্যা সন্তানের জন্ম

১৩

রাতে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করছিল রোহিঙ্গা কিশোর, অতঃপর...

১৪

কমিউনিটি ব্যাংকের সঙ্গে হোটেল সারিনার ব্যবসায়িক চুক্তি স্বাক্ষর

১৫

এ-লেভেল শেষ করেই এ-লেভেলের পাঠ্যবই লিখলেন সালাহউদ্দিন-পুত্র

১৬

ফিরছিলেন হজ শেষে, বিমানবন্দরে আ.লীগ নেতা আটক

১৭

ইরানের দূতাবাসে ‘নেতানিয়াহুর অপরাধের’ নিন্দা জানালেন ইহুদিরা

১৮

তেলবাহী ট্রাকচাপায় নিহত ৩, আহত ৪

১৯

স্থানীয় শিল্পে উৎপাদিত ফ্রিজ, এসির খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার

২০
X