কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৫:০২ পিএম
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন

চীনের আগে ভারত সফর চেয়েছিলেন ড. ইউনূস, কিন্তু...

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি : সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি : সংগৃহীত

চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তিনি এ সফরের আগে ভারত যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।

বুধবার (২৫ মার্চ) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস চীনের আগে ভারত সফর করতে চেয়েছিলেন। তবে দেশটি থেকে ঢাকার এ অনুরোধের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।

তিনি বলেন, বুধবার (২৬ মার্চ) চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সফলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফরে তিনি উৎপাদন খাতে চীনা বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে একটি গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরেছেন।

ভারতের সঙ্গে ড. ইউনূস উষ্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চান জানিয়ে শফিকুল বলেন, আমরা আমাদের আগ্রহ দেখিয়েছি এবং গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ভারতে দ্বিপাক্ষিক সফরের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। চীন সফর চূড়ান্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে এ অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে দুর্ভাগ্যবশত ভারত থেকে এ বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার মাসের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় নেতা হিসেবে ড. ইউনূস চীনে আতিথ্য পাচ্ছেন। তার আগে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চীন সফর করেছিলেন।

প্রেস সচিব জানান, চীন থেকে ফেরার পর ৩-৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, আমরা এ সম্মেলনের সময় ড. ইউনূস এবং মোদির মধ্যে বৈঠকের জন্য আবারও অনুরোধ করেছি। এ বিষয়ে আমরা ভারতের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করছি।

এর আগে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. ইউনূস শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার সময় চীনা বিনিয়োগ নিশ্চিত করাও আলোচ্যসূচিতে শীর্ষে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০০৬ সালে চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে ভারতকে ছাড়িয়ে যায়। গত বছর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ২২ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল চীনা রপ্তানি।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগদানকারী প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হয়ে ওঠে এবং বৈশ্বিক সংযোগ কর্মসূচির আওতায় চীনা বিনিয়োগের একটি প্রধান গ্রাহক হয়ে ওঠে। যা গ্লোবাল সাউথের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য বেইজিংয়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে জড়িত, বিশেষ করে পদ্মা সেতু রেল লিঙ্ক এবং কর্ণফুলী টানেল। ঢাকা এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলা বন্দরের সম্প্রসারণের জন্য চীনা ঋণ চাইছে। গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতা চীনের বাংলাদেশে বিশাল অর্থনৈতিক বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগের জন্ম দেয়, যার মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বকেয়া ঋণও রয়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেয়ারব্যাঙ্ক সেন্টার ফর চাইনিজ স্টাডিজের অনাবাসিক সহযোগী আনু আনোয়ার বলেন, ইউনূস বেইজিংকে আশ্বস্ত করতে চাইবেন, অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে তার অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং কৌশলগত সম্পৃক্ততা সুরক্ষিত রয়েছে।

চীনের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের উপপরিচালক লিন মিনওয়াং বলেন, ড. ইউনূস বেইজিং সফরে হাসিনার সময়ে স্বাক্ষরিত কিছু চুক্তি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। হাসিনা গত বছরের জুলাইয়ে চীন সফরের সময় উভয় পক্ষ ২০টিরও বেশি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যেখানে বেইজিং ১ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

লিন বলেন, পরিকল্পিত সহযোগিতার অনেকগুলো তখন থেকেই আটকে আছে। আমি মনে করি চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন পুনরায় শুরু করার সময় এসেছে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বেইজিং ঢাকার সঙ্গে তার সম্পর্ক ক্রমাগতভাবে বাড়িয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অক্টোবরে ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি ড. ইউনূসসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের পাশাপাশি সামরিক ও প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন।

গত সপ্তাহে, বাংলাদেশের একটি মেডিকেল প্রতিনিধিদল দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুনমিং শহর পরিদর্শন করেছে। ভারত বাংলাদেশি রোগীদের জন্য তাদের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবার বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ড. ইউনূসের সফরের সময় তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যমুনার সামনে তৈরি হচ্ছে আ.লীগ নিষিদ্ধের মঞ্চ

বিমানে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে ট্রাম্প প্রশাসন

পারভেজ হত্যায় গ্রেপ্তার টিনা, ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ

আইভীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের গাড়িবহরে হামলা

ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা, অস্বীকার পাকিস্তানের

পাকিস্তানে আরেকটি ভারতীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত

‘৯ মাসেও গণহত্যাকারী দল নিষিদ্ধ হলো না কেন’

বাদ জুমা বড় জমায়েতের ডাক হাসনাত আবদুল্লাহর

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা / নিহত ৪ জনের দুজন ছিলেন মসজিদের ইমাম

রাতে শিবির মাঠে নামায় পাল্টে গেল দৃশ্যপট

১০

যমুনার সামনে রাতভর যা যা হলো

১১

কয়টি রাফায়েল আছে ভারতের, একেকটির দাম কত?

১২

ফের গোলাগুলি শুরু, উত্তেজনা তুঙ্গে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে

১৩

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে নাক গলাতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র

১৪

দুপুরের মধ্যেই আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ড. মাসুদের

১৫

সকালেও বিক্ষোভ চলছে যমুনার সামনে

১৬

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিশুরা

১৭

আগুনে ঘি ঢালা নয়, শান্তি চাই : এরদোয়ান

১৮

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৯

আরব সাগরে ভারতের অভিযান, টার্গেটে পাকিস্তান

২০
X