‘যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন’ ভাবসম্প্রসারণে এমনটি শোনা গেলেও এবার মাটি খুঁড়লেই কোটি টাকার হিরা বেরিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। এমনটি ঘটেছে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে। সেখানকার এক দিনমজুর মাটি খুঁড়ে কোটি টাকার হীরা পেয়েছেন।
জানা গেছে, খরিপ মওসুমে মাঠে কাজ করতে গিয়ে ভাগ্য বলদে গেছে এক দিনমজুরের। জমিতে চাষ করতে গিয়ে কোদালের কোপে উঠে আসে এক টুকরা হীরা। যা বিক্রি হয় দুই কোটি টাকায়। তিনি ছাড়াও আরো বহুজনের এভাবে ভাগ্য খুলেছে। গ্রীষ্মের রুক্ষ জমিতে বৃষ্টি নামলেই দেখা মেলে হিরাসহ নানা দামি রত্ন। প্রদেশের অনন্তপুর এবং কুর্নুল জেলায় এসবের দেখা মেলে। তাই বর্ষা এলেই এ এলাকায় হীরা খোঁজার মওসুম শুরু হয়ে যায়।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, ২০২১ সালে জন্নাগিরি গ্রামে তিন ব্যক্তি ২ কোটি ৪ লাখ টাকার খুঁজে পেয়েছিলেন। এছাড়া গত বছরে ৪০ লাখ টাকার একটি হীরা পেয়েছিলেন এক কৃষক। ৩০ ক্যারেটের ১ কোটি ৪ লাখ টাকার আরেকটি হীরা পেয়েছিলেন অপর একজন কৃষক।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৬০ লাখ টাকার হীরা পান এক কৃষক। ২০২০ সালে অন্ধ্রের দুই বাসিন্দাও পেয়েছিলেন হীরা। তবে পাঁচ ও ছয় লাখ টাকার দুটি হীরা তারা যথাক্রমে দেড় লাখ ও ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন।
অনেকে মনে করেন, রায়লসীমা এলাকায় দামি রত্নের খোঁজ পাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। কেননা মধ্যযুগে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের জমজমাট রাজত্বকালে হীরা-জহরতের জন্য এ অঞ্চলের খ্যাতি ছিল। কথিত আছে যে, শাক-সবজির মতো হিরাসহ নানা দামি রত্নের বেচাকেনা হতো। তবে কালের বিবর্তনে সেসব হারিয়ে গেলেও এখনো কুর্নুল জেলার তুগ্গলি, জন্নাগিরি, মদ্দিকেরা এবং অনন্তপুরের বজ্রকরুর এলাকায় বর্ষাকালে ‘হিরের ফসল’ তোলেন অনেকে। বর্ষাকালে নানা প্রান্তের লোকেরা এখানে জড়ো হোন। স্থানীয়রা ছাড়াও আশপাশের অঞ্চল কর্নাটক ও তেলঙ্গানা থেকেও লোকজন আসেন। এছাড়াও জড়ো হোন ব্যবসায়ীরা। এমনকি হিরা পেলে মধ্যস্থতাকারীদের দেখা যায় সেখানে।
মওসুমের এ সময়ে জমে ওঠে পর্যটন ব্যবসা। কেননা হীরা খোঁজে অনেকে সেখানে অবস্থান করেন। কেউ কেউ সেখানে তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটান। অনেকে আবার আশপাশের হোটেল, লজ, অতিথিশালায় রাত্রিযাপন করেন। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে এসবের মূল মওসুম হিসেবে ধরা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, হীরা খোঁজার মওসুমে প্রশাসনের তেমন কড়াকড়ি দেখা যায় না। দামী রত্ন পেলেই ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়ে সেগুলো বিক্রির চেষ্টা করেন মধ্যস্থতাকারীরা। ফলে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জন্নাগিরি গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, তিনি চাষের জমিতে একটি গিরা খুঁজে পেয়েছিলেন। তবে পুলিশ-প্রশাসনের হেনস্থার ভয় এবং নিজের সুরক্ষার কথা ভেবে সেটি দেড় কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন। তার ধারণা এটির দাম আরও বেশি।
তার অভিযোগ, হীরা বিক্রির সময় পুলিশকে ছয় লাখ টাকা এবং রাজস্ব বিভাগকে ৪ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়া বাকি টাকায় যাবতীয় ঋণ শোধ করেছেন তিনি।
বর্ষায় অন্ধ্রের জমিতে হীরা পাওয়া নিয়ে এখনো কোনো গবেষণা হয়নি। কেবল এই মওসুমেই হীরা ছাড়াও দামি রত্নের দেখা মেলে। খনি বিশেষজ্ঞ এবং ভূতত্ত্ববিদদের মতে, এই এলাকাগুলোতে সরকারি উদ্যোগে গবেষণা চালানো উচিত।
মন্তব্য করুন