স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের পতনের পর নতুন প্রতীক উন্মোচন করেছে সিরিয়া। দেশটির এখন নতুন জাতীয় প্রতীক ‘সোনালি ঈগল’। এ প্রতীকের মধ্যে ফুটে উঠেছে দেশটির ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ নানা বিষয়।
শুক্রবার (৪ জুলাই) আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এ প্রতীকের অর্থ এবং কেন এটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাজধানী দামেস্কে এক অনুষ্ঠানে গোল্ডেন ঈগল তথা সোনালি ঈগলকে জাতীয় প্রতীক হিসেবে উন্মোচন করা হয়।
দেশটির কর্মকর্তারা এটিকে স্বৈরাচারী শাসনের উত্তরাধিকার থেকে মুক্তি এবং সেবা, ঐক্য ও জনগণের বৈধতার দ্বারা সংজ্ঞায়িত একটি রাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা জানায়, এই নতুন প্রতীক সিরিয়ার ‘জাতীয় পরিচয় ও ভাবমূর্তি’র এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এটি দেশের ভেতরে ও বাইরের কাছে সিরিয়ার অবস্থানকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে।
আরব নিউজ জানিয়েছে, ঐতিহাসিকভাবে ঈগল সিরিয়ার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। সপ্তম শতকে ইসলামী বিজয়ের সময় ‘থানিয়াত আল-উকাব’ যুদ্ধে এবং স্বাধীনতার পর ১৯৪৫ সালের রাষ্ট্রচিহ্নে এই পাখির ব্যবহার ছিল। নতুন নকশায় সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগের প্রতীকের লড়াকু ঢালটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর পরিবর্তে ঈগলের মাথার ওপর তিনটি তারা বসানো হয়েছে। এটি জনগণের ক্ষমতাকে রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে তুলে ধরে। ডানাগুলো বিস্তৃত কিন্তু আগ্রাসী নয়, এবং প্রতিটি ডানায় সাতটি করে পালক আছে, যা দেশের ১৪টি গভর্নরেটকে নির্দেশ করে। লেজের পাঁচটি পালক দেশের পাঁচটি ভৌগোলিক অঞ্চল—উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম ও কেন্দ্রকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
সিরিয়ার সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জনগণ আকাশের তারার উচ্চতা স্পর্শ করতে চায়, রাষ্ট্র তাদের রক্ষা ও সক্ষম করছে। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণই রাষ্ট্রকে পুনর্জাগরিত করবে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারা এ পরিবর্তনকে ‘জনগণের ইচ্ছা থেকে জন্ম নেওয়া ও তাদের সেবা করা সরকারের প্রতীক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, নতুন প্রতীকটি সিরিয়াকে আর একটি দমনমূলক নিরাপত্তাকেন্দ্রিক রাষ্ট্র নয়; বরং একটি নাগরিকমুখী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শাইবানি বলেন, আমরা পুরোনো শাসনের ভ্রষ্ট বাস্তবতাকে প্রত্যাখ্যান করেছি। এই নতুন প্রতীক আমাদের পরিচয়ের ছড়িয়ে থাকা টুকরোগুলোকে একত্র করে ভবিষ্যৎ নির্মাণের ভিত্তি স্থাপন করবে। তিনি এটিকে ‘সাবেক শাসনের বর্ণনার সাংস্কৃতিক মৃত্যু’ হিসেবেও উল্লেখ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এ প্রতীক সিরিয়ার শিল্পী ও ডিজাইনারদের হাতেই গড়া। এতে নেতৃত্বে ছিলেন খ্যাতিমান শিল্পী খালেদ আল-আসালি। অনুষ্ঠানে আল-শাইবানি বলেন, প্রতিটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমরা সিরিয়ার নতুনরূপ উপস্থাপন করেছি। আজ আমরা কেবল প্রতীক্ষার নাম নই, আমরা বাস্তবতার অংশ।
মন্তব্য করুন