

মধ্যপ্রাচ্যের আকাশসীমায় নতুন করে শুরু হয়েছে সামরিক ভারসাম্যের খেলা। সম্প্রতি ইরানের আকাশসীমায় পুরোনো হলেও কার্যকর মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের আগমন আন্তর্জাতিক মহলে জল্পনা তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি রাশিয়ার সরবরাহ করা সম্ভাব্য নতুন চালানের অংশ হতে পারে। যদিও আন্তর্জাতিক কোনো স্বতন্ত্র সূত্র এটি নিশ্চিত করেনি, তবে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসনিম এই নতুন মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান উড্ডয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আসলে ইরান কয়েক বছর আগে থেকেই রাশিয়ার কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩৬-৪৮টি এসইউ-৩৫এস সিরিজের যুদ্ধবিমান সংগ্রহের আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিল। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান জটিল পরিস্থিতি এবং রুশ বিমান বাহিনীর নিজস্ব চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ওই সরবরাহ প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে বিলম্বিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব কারণে রাশিয়া সাময়িক সমাধান পূরণের লক্ষ্যে তাৎক্ষণিকভবে কিছু মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে পারে বলে একাধিক আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও সামরিক থিংক ট্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ ছাড়া দেশটি চীনের কাছ থেকে অজানা সংখ্যক জে-১০সিই সিরিজের যুদ্ধবিমান ক্রয় করতে যাচ্ছে বলেও একাধিক তথ্যসূত্রে সংবাদ প্রকাশিত হলেও বিষয়টি ইরান কিংবা চীন সরকারের তরফে নিশ্চিত করা হয়নি।
সম্প্রতি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি সংঘাতে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কিছু সীমাবদ্ধতা আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সংঘাতের সময় ইরানের বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অস্থায়ীভাবে কার্যকারিতা হারায় বলে বিভিন্ন রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। একই সময়ে দেখা যায়, ইরান তার নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কমব্যাট ড্রোন, ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা পরিচালনা করে, যা দেশটির সুস্পষ্ট উচ্চস্তরের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রদর্শন করে।
তবে এই ঘটনাগুলো ইরানকে তার বিমানবাহিনী এবং আকাশ প্রতিরক্ষা কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও প্রযুক্তিগত ঘাটতি মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিয়েছে। যার ফলে দেশটি এখন তার বন্ধুভাবাপন্ন দেশ বিশেষ করে রাশিয়া এবং চীনের কাছ থেকে খুব দ্রুত শতাধিক যুদ্ধবিমান এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহ করতে চায়।
ইরানের বর্তমান বিমান বহরকে বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, সংখ্যাগতভাবে দেশটির হাতে প্রায় হাজারের কাছাকাছি কমব্যাট এয়ারক্রাফট থাকলেও এর অধিকাংশ প্ল্যাটফর্ম ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ দশকের অতি পুরোনো প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। ইরানের বিমান বাহিনীতে সক্রিয় থাকা এই পুরোনো এয়ারফ্রেম, অ্যাভিয়োনিক্সের সীমাবদ্ধতা, খুচরা যন্ত্রাংশ সংকট এবং ইঞ্জিন প্রযুক্তির ঘাটতি এসব বিমানকে আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের চাহিদার তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে দেশটি গত এক যুগে নতুন কোনো প্রজন্মের যুদ্ধবিমান বা এরিয়াল সিস্টেম ক্রয় বা সংগ্রহ করতে পারেনি।
বিমান বাহিনীর ফিক্সড এয়ার উইংস সক্ষমতার বিবেচনায় পিছিয়ে থাকলেও, ইরান সাম্প্রতিক সময়ে নিজস্ব প্রযুক্তির কমব্যাট ড্রোন ও মিসাইল প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে সাহেদ, মোহাজের, কামানি এবং ফোত্রোস সিরিজের ড্রোন আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে মধ্যপ্রাচ্যের জটিল নিরাপত্তা বিন্যাসে ইরান বহু বছর ধরে নিষেধাজ্ঞা ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে থেকেও নিজস্ব প্রতিরক্ষা কাঠামো বা সামরিক সক্ষমতা সফলতার সাথে বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। আর এর পাশাপাশি অতি সাম্প্রতিক যুদ্ধ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশটি আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার দিকে আরও বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছে।
মন্তব্য করুন