ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর পশ্চিমাদের ঐক্যবদ্ধ চাপে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুদ্ধে এতদিন মস্কোর হয়ে লড়ছিল ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপ। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পনগরী বাখমুতে এই বাহিনীর কাছেই পরাজিত হয় জেলনস্কির বাহিনী। কিন্তু এবার পুতিনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই অভ্যুত্থান শুরু করল ভাড়াটে এই গ্রুপটি। প্রিগোঝিন যে কোন মূল্য রাশিয়ান সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের পতন ঘটাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি ইউক্রেন থেকে সীমান্তের লাগোয়াবর্তী রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে প্রবেশ করেছেন এবং একটা রাশিয়ান হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছেন বলে দাবি করছেন। এখন তাদের লক্ষ্য রাজধানী মস্কো। ইউক্রেন যুদ্ধে ওয়াগনার বাহিনী রাশিয়ার হয়ে লড়াই করছে। কিন্তু ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন কয়েক মাস ধরে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সামরিক প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বারবার এই দুজনের অযোগ্যতা ও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ওয়াগনারকে কম অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ করতে থাকেন। এ নিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার টানাপোড়েন শুরু হয়। ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ৬২ বছর বয়সী ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন বলেন, ‘‘আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এবং এর শেষ দেখে ছাড়ব। আমাদের এসব বিশৃঙ্খলার অবসান করতে হবে। এটি কোনো সামরিক অভ্যুত্থান নয়, বরং ন্যায়বিচারের আন্দোলন। আমাদের এ চলার পথে যা কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তার সবকিছুকে ধ্বংস করে দেব।’’ প্রিগোঝিন বলেন,‘‘এইমাত্র বেসামরিক একটি স্তম্ভের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। পিএমসি ভাগনারের সেনাদলগুলো হেলিকপ্টারটিকে ভূপাতিত করেছে। আমরা চিফ অব জেনারেল স্টাফ এবং সোইগুর সঙ্গে দেখা করতে চাই। যতক্ষণ তারা না আসছে, আমরা এখানে থাকব, রোস্তোভ অবরুদ্ধ করব এবং মস্কোর দিকে এগিয়ে যাবো।’’
এদিকে রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেল বলেছেন, সশস্ত্র বিদ্রোহের মামলায় ওয়াগনার প্রধানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধাদের ওপর মস্কো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে, প্রিগোঝিন এমন অভিযোগ করার পরই তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাকে আটকের জন্য রুশ নিরাপত্তা সংস্থা এফএসবি ভাড়াটে কোম্পানিটির যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানায়, ওয়াগনার প্রধান অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেওয়ার পর পরই শহরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। রয়টার্সের এক ভিডিওতে শহরজুড়ে পুলিশ সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিন বলেছে, ওয়াগনার ও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার উত্তেজনার বিষয়টি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে জানানো হয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, সশস্ত্র বিদ্রোহের অভিযোগে প্রিগোঝিনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। প্রিগোঝিন একের পর এক অডিও বার্তায় অভিযোগ করেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ওয়াগনারের ক্যাম্পগুলোয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। এতে তাদের যোদ্ধা ও কমরেডরা মারা গেছেন।
মন্তব্য করুন