মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রতিনিধি ইলহান ওমর বুধবার জানিয়েছেন, তিনি মার্কিন কংগ্রেসে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগের বক্তব্যে অংশগ্রহণ করবেন না। মিনেসোটার এই আইনপ্রণেতা প্রেসিডেন্ট হারজগের সরকারকে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থি সরকার হিসেবে অভিধা দিয়েছেন। তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান সময়ের অবস্থা তুলে ধরে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘জাহান্নামে গেলেও আমি এমন একজন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য অনুষ্ঠানের সময়ে উপস্থিত থাকব না যিনি আমাকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং আরেক ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি রাশিদা তালায়েবকে তার দাদির সঙ্গে দেখা করতে দেননি।’
প্রথম কোনো প্রগতিশীল আইনপ্রণেতা হিসেবে ইলহান ওমর ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হারজোগের বক্তব্য বাতিল করলেন। এই বয়কটের মিছিলে আপাতত অন্য কোনো আইনপ্রণেতা যুক্ত হবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার এই সিদ্ধান্ত প্রো-ইসরায়েলি সংগঠনগুলোর গায়ে জ্বলুনির সৃষ্টি করবে। ইসরায়েল ও ডেমোক্রেটিক নেতৃত্ব নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের পর রিপাবলিকান পার্টি তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি থেকে বের করে দেয়। এদিকে, রিপাবলিকান পার্টি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি দ্বন্দ্বে ইলহান ওমরের অবস্থানকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।
ক্ষুব্ধ ইলহান তখন বলেছিলেন, ‘আপনি যদি অভিবাসী হন, বিশ্বের একটি প্রান্ত থেকে এসে থাকেন, আপনার গায়ের রং ভিন্ন হয় কিংবা আপনি মুসলিম হন, তাহলে তারা (রিপাবলিকানরা) আপনাকে সন্দেহ করবে।’
তবে এর আগের মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐতিহাসিক সফরের সময় তার বক্তব্য ও বয়কট করেন ইলহান ওমর। তিনি সে সময় মোদি সরকারের মানবাধিকার নিয়ে কড়া সমালোচনা করে তিনি তার বক্তব্য বয়কট করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি গত মাসে মানবাধিকারবিরোধী কাজকর্মের প্রমাণ দেখে নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য বয়কট করেছিলাম এবং এ মাসে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগের বক্তব্য বয়কট করলাম।’ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এবং সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমারের আহ্বানে ইসরায়েল রাষ্ট্রগঠনের ৭৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে এই বক্তব্য রাখবেন হারজগ। ওমর আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই কূটনৈতিক বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে সন্ধি গড়ে তুলতে পারত। কিন্তু বর্তমান সরকারকে টেলিভিশনে প্রকাশিতব্য যৌথ ভাষণের সুযোগ দেওয়ার ঘটনা অবশ্যই ভুল সময়ে ভুল বার্তা দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টকে দাওয়াতই দেওয়া উচিত হয়নি। এটি এমন একটি সরকার যে সরকারের প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো নির্বাচিত দুই কংগ্রেস সদস্যকে ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
ওমর বলেন, ‘ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থি এ সরকার সরাসরিভাবে ফিলিস্থিন রাষ্ট্রের স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। তারা শান্তির কফিনে শেষ পেরেক মেরেছে এবং বিভক্ত রাষ্ট্রের ধারণার সূত্রপাত ঘটাচ্ছে।’
ওমর ইলহান এখানেই থামেননি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রীর আক্রমণের কথাও তোলেন তিনি। ‘যুক্তরাষ্ট্রের পতাকায় ইসরায়েল আর শুধু একটি স্টার হিসেবে নেই।’ তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি সরকার যা এখন করছে তাকে আইন গবেষকরা জুডিশিয়াল ক্যু বলে থাকেন। মাধ্যমে ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করা হচ্ছে এবং মাসজুড়ে ইসরায়েলে প্রতিবাদ হচ্ছে।
সম্প্রতি জেনিনে ইসরায়েলি হামলার কথাও বলেন তিনি। এটি ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক হামলা। ওমর ইসরায়লের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জানানো আপত্তির কথাও তোলেন। এসময় তিনি ইসরায়েলকে সামরিক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের চার বিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘটনারও সমালোচনা করেন।
এর আগে ২০১৯ সালে টুইট করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের ভেতর ইসরায়েলিদের জন্য সমর্থন আসলে বেনজামিনদের জন্য সমর্থন।’ এজন্য তাকে দুইপক্ষের কড়া সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
মন্তব্য করুন