নানা কারণে বগুড়াবাসীর প্রাণের দাবি জেলার বিমানবন্দরটি চালুর। এর মাধ্যমে যোগাযোগে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও ব্যবসায় খাত যে অনেকটাই সমৃদ্ধ হবে, তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বরং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলার বিমানবন্দরটি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলা ও পার্শ্ববর্তী নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসার প্রধান হাব হবে বগুড়া।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, তারকা খচিত একাধিক হোটেল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু, সরকারি-বেসরকারি একাধিক মেডিকেল কলেজ রয়েছে বগুড়ায়। পাশাপাশি কৃষি যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী ফাউন্ড্রি শিল্প, কাগজ, সিরামিক, পাটজাত পণ্য এবং ওষুধ উৎপাদনকারী শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার কারণে দেশে-বিদেশে বগুড়ার গুরুত্ব বাড়ছে। এ ছাড়া প্রাচীন জনপদ মহাস্থান গড়ের কারণেও এ জেলায় প্রতি বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা বেড়েছে। পর্যটন-সংশ্লিষ্টদের হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক বগুড়ায় আসেন। তাই বিমানবন্দরটি চালু হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায় গতি ফিরবে, যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
তবে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, দুই যুগ পর বগুড়ার মানুষের প্রাণের দাবি বিমানবন্দর প্রকল্পের বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এই বিমানবন্দরে নতুন করে রানওয়ে নির্মাণে অন্তর্বর্তী সরকার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এরই মধ্যে রানওয়ে নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বরাদ্দ প্রাপ্তির কথা নিশ্চিত করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়ে নির্মাণে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি, যাত্রীর পাশাপাশি বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের উপযোগী করে দ্রুত রানওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
জানা গেছে, বগুড়া শহর থেকে সাত কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সদর উপজেলার এরুলিয়া। এখানে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। পরে ১৯৯৫ সালে সদরের এরুলিয়া ও কাহালু উপজেলার বড়মোহর মৌজায় ছোট রানওয়ে (শর্ট ফিল্ড টেক অব ল্যান্ডিং পোর্ট) নির্মাণে ১০৯ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রানওয়ে, কার্যালয়, কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে। তবে প্রকল্পের কাজ আর তেমন এগোয়নি। একপর্যায়ে ২০০৫ সালে বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হলে সেখানে তারা ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর্স স্কুল গড়ে তোলে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বগুড়ায় বিমানবন্দরের রানওয়ে নির্মাণ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে জরুরি দরপত্র আহ্বান করেছেন তারা।
এর আগে বগুড়া জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে সাড়ে ৪ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়েকে ৬ হাজার ফুটে উন্নীত করা গেলেই বগুড়া বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী ও বাণিজ্যিক বিমান ওঠানামা সম্ভব। দেড় হাজার ফুট রানওয়ের জন্য বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশে ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ৩ নভেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়।
বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এম শওকত উল ইসলাম বলেন, উড়োজাহাজ চলাচলে সবচেয়ে নিরাপদ বগুড়ার আকাশপথ। বগুড়া বিমানবন্দর চালু করতে বর্তমান সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এটি চালু করা গেলে পার্শ্ববর্তী নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসার পরিসর বাড়বে। প্রধান হাব হিসেবে ভূমিকা রাখবে বগুড়া।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইরুল ইসলাম বলেন, বগুড়ায় পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর চালুর পাশাপাশি বাণিজ্যিক বিমান চলাচল শুরু করা গেলে বগুড়াসহ এই অঞ্চলের কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাবেন। এতে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা গেলেই বগুড়া থেকে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল সম্ভব হবে। এ জন্য মাত্র ২৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। আশা করি, শিগগির এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
মন্তব্য করুন