

শীত এলেই অনেকেই দৌড়ানো বা হাঁটার অভ্যাসে ছেদ টানেন। ঠান্ডা হাওয়া, কুয়াশা আর কম তাপমাত্রায় সকালে বাইরে বের হওয়াই কষ্টকর মনে হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক প্রস্তুতি ও সতর্কতা নিলে শীতকালই হতে পারে দৌড়ানোর সবচেয়ে ভালো সময়। ঠান্ডা আবহাওয়া শরীরের সহনশীলতা বাড়ায়, মেটাবলিজম সক্রিয় রাখে এবং মন-মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়ম মেনে দৌড়ালে শীতের সকালের দৌড় হতে পারে সহজ ও কার্যকর এক ব্যায়াম।
মেটাবলিজম বাড়ায়, চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে
ঠান্ডায় শরীরকে উষ্ণ রাখতে বাড়তি শক্তি লাগে। ফলে ক্যালরি পোড়ে বেশি এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
মানসিক দৃঢ়তা বাড়ায়
ঠান্ডা সকালে দৌড়াতে বের হওয়াই এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। নিয়মিত এই অভ্যাস মানসিক শক্তি, শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
হার্ট ও ফুসফুসকে শক্তিশালী করে
শীতে দৌড়ানোর সময় হার্ট ও ফুসফুস একটু বেশি কাজ করে। এতে রক্তসঞ্চালন ভালো হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে সহনশীলতা বাড়ে।
মেজাজ ভালো রাখে, শীতকালীন বিষণ্নতা কমায়
খোলা বাতাস, দিনের আলো আর দৌড়ানোর সময় নিঃসৃত এন্ডোরফিন মন ভালো রাখে, স্ট্রেস কমায় এবং মানসিক সতেজতা আনে।
মনোযোগ ও মানসিক ফোকাস বাড়ায়
ঠান্ডা বাতাস শরীর-মনে সতেজতা আনে। ফলে মনোযোগ, চিন্তাশক্তি ও কাজের স্পষ্টতা বাড়ে।
ঘুমের মান উন্নত করে
শীতে দৌড়ানোর পর শরীর স্বাভাবিকভাবেই আরাম পায়। এতে রাতের ঘুম গভীর ও শান্ত হয়।
জয়েন্ট ও মাংসপেশি শক্তিশালী করে
শীতের মাটিতে দৌড়ানোর সময় সহায়ক মাংসপেশিগুলো বেশি সক্রিয় হয়। এতে ব্যালেন্স ভালো থাকে এবং ইনজুরির ঝুঁকি কমে।
শীতে দৌড়ানো উপকারী হলেও কিছু ঝুঁকি থাকে। তাই এসব বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি—
ঘরের ভেতর ওয়ার্ম-আপ করুন: হালকা স্ট্রেচ, জাম্পিং বা মোবিলিটি এক্সারসাইজে শরীর গরম করে নিন
আবহাওয়া দেখে বের হন: ঘন কুয়াশা, অতিরিক্ত ঠান্ডা বা ভেজা রাস্তায় দৌড়ানো এড়িয়ে চলুন
পানি পান করতে ভুলবেন না: ঠান্ডায় তৃষ্ণা কম লাগলেও শরীর ডিহাইড্রেট হতে পারে
মুখ ঢেকে শ্বাস নিন: ঠান্ডা বাতাসে শ্বাসকষ্ট হলে স্কার্ফ বা মাস্ক ব্যবহার করুন
দিনের আলোতে দৌড়ান: দৃশ্যমানতা ভালো থাকে, পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে
দৌড় শেষে ভেজা কাপড় দ্রুত বদলান: হাইপোথার্মিয়া এড়াতে শুকনো পোশাক পরুন
হৃদরোগ বা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা থাকলে সাবধান: ধীরে শুরু করুন, হঠাৎ গতি বাড়াবেন না
দৌড়ানোর সময় যদি বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা বা হাত-পায়ে অসাড়তা অনুভব করেন, সঙ্গে সঙ্গে থামুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শীত মানেই দৌড় বন্ধ করার সময় নয়। বরং সঠিক পোশাক, প্রস্তুতি ও সচেতনতা থাকলে শীতকাল হতে পারে দৌড়ানোর জন্য সবচেয়ে উপকারী মৌসুম। এটি শুধু শরীর ফিট রাখে না, বরং মন ভালো রাখে, ঘুমের মান বাড়ায় এবং হৃদ্স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই একদিন সাহস করে বেরিয়ে পড়ুন—শীতের সকালের দৌড়ই হয়তো এনে দেবে নতুন এনার্জি আর সুস্থতার অনুভূতি।
মন্তব্য করুন