জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার নির্মাণের আলোচিত প্রকল্প ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ বাস্তবায়ন করতে অর্থ খোঁজ করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এরই মধ্যে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বছরে অতিরিক্ত তিন মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধের ক্ষমতা বাড়বে।
বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, প্রকল্পটির ব্যয় আগের চেয়ে বেড়েছে। বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আমরা এরই মধ্যে এআইআইবির কাছে আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছি। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ঋণের সুদ প্রসঙ্গে বলেন, সুদ একটু বেশি হবে। এআইআইবি প্রায় ছয় শতাংশ সুদের হার প্রস্তাব করছে। আর বাকি অর্থ বিপিসি থেকে দেওয়া হবে। চেয়ারম্যান বলেন, সরকার আলোচনা চূড়ান্ত করার পর বিপিসি দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু করবে। প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর থেকে শেষ হতে পাঁচ বছর সময় লাগবে।
জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশ সরকারের তহবিল থেকে আর বাকি ৬০ শতাংশ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও বহুজাতিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়া হবে। আর এই প্রকল্পে বিপিসি নিজস্ব দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। জানা গেছে, বিপিসি তার বিপণন মুনাফা থেকে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন টাকা আলাদা করে রেখেছে এবং অতিরিক্ত ১১০ বিলিয়ন টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। এ ছাড়া এরই মধ্যে প্রকল্পটিতে মার্কিন এক্সিম, চীনা ব্যাংক এবং অন্যান্য বহুপক্ষীয় দাতা সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, ৫৬ বছর আগে নির্মিত বাংলাদেশের একমাত্র তেল শোধনাগারটির পরিশোধন ক্ষমতা দেড় মিলিয়ন টন, যা দেশের জ্বালানি চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ পূরণ করে। নতুন তেল শোধনাগারটি অতিরিক্ত ৩ মিলিয়ন টন পরিশোধন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দেশের জ্বালানি চাহিদার ৬০ শতাংশ পূরণ করবে।
এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত বছরের ২৯ আগস্ট বিশেষ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইনের অধীনে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ হিসেবে প্রস্তাবিত ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়। একই সঙ্গে প্রকল্পটির ডিপিপি বৈদেশিক মুদ্রার হালনাগাদ রেট অনুযায়ী প্রাক্কলন এবং সমস্ত ক্রয় পরিকল্পনা পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী প্রণয়নপূর্বক পরিকল্পনা কমিশনে পুনর্গঠিত ডিপিপি প্রেরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশনার পর প্রকল্পটির জন্য নতুন করে ডিপিপি করে বিপিসি।
জ্বালানি বিভাগে সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে প্রকল্পটিতে এস আলম গ্রুপকে যুক্ত করা হয়। গ্রুপটি এখানে বিনিয়োগের বিপরীতে ৫১ শতাংশ মালিকানা চেয়েছিল। তবে বিপিসি ৬০ শতাংশ মালিকানা সরকারের হাতে রাখার পক্ষে মত দেয়। পরে অংশীদারত্বের বিষয়টি চূড়ান্ত না করে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সমঝোতা স্মারকের খসড়াটি ভেটিংয়ের জন্য গত বছরের জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। এস আলম গ্রুপের অংশীদারত্বে পরিশোধনাগার নির্মাণ নিয়ে সম্মত ছিল না জ্বালানি বিভাগও।
বর্তমান ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধনাগারটি নির্মাণ করেছিল ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান টেকনিপ। নতুন পরিশোধনাগারটি তাদের মাধ্যমে করার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। দেশে জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা না বাড়ায় বেশি পরিমাণে ডিজেল আমদানি করতে হয়। এতে প্রতি বছর বাড়তি ডলার খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। বছরে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসি। এর মধ্যে ৪৬ লাখ টন ডিজেল। দেশের একমাত্র পরিশোধনাগারটি থেকে পাওয়া যায় ছয় লাখ টন ডিজেল, বাকিটা আমদানি করতে হয়।
মন্তব্য করুন